মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢামেক করোনা ইউনিটে আরও ৮ জনসহ সর্দি কাশি নিয়ে ১৩ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা সন্দেহে ভর্তি হওয়া ৮ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। ঢাকার ধামরাই, সিলেট ও কুমিল্লায় তাদের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।  তাদের মৃত্যুর পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোতে। তাদের বাড়িঘর ও এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। ঢাকা মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ৮ জনের মৃত্যু : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের করোনা পজেটিভ ছিল। রবিবার বিকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৯০ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৮ জন হলেন- ঢাকার বাচ্চু মিয়া (৬০), জীবন নাহার (৫৫), পরিমল দে (৫৫), ডা. আনিসুর রহমান (৬০), খোদেজা বেগম (৬৫), পাবনার জান্নাতুল ফেরদৌসী (৪০), নারায়ণগঞ্জের রিমন  হোসেন (২৬) এবং ঝালকাঠির ফাতেমা বেগম (৭২)। এদের মধ্যে পরিমল দের করোনা পজেটিভ ছিল। ঢাকার ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের ভাটারখোলা নওগাঁও এলাকায় গতকাল দুপুরে রণজিৎ সরকার (৫০) নামে এক আইনজীবী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তিনি ঢাকা থেকে ৭ দিন আগে জ¦র ও গলাব্যথা ও ঠান্ডা কাশি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে বিকালেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসকরা তার করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায়। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র জানান, ওই নারীর শরীরে করোনার উপসর্গ জ¦র, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এ ছাড়া তিনি যক্ষ্মার রোগীও ছিলেন। এর পরও করোনার উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর বোঝা যাবে তিনি কভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন কি না। কুমিল্লার দেবীদ্বারে করোনা উপসর্গ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে লাল মিয়া (৮০), নবিয়াবাদ গ্রামের হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া (৩৫) ও দেবীদ্বার পৌর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নয়ন মিয়া (৬০)। লাল মিয়া শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান। কুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত লাল মিয়ার করোনা নমুনা সংগ্রহ করেন। রবিবার গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া রবিবার ভোর ৪টায় নিজ বাড়িতে মারা যান। স্থানীয়রা জানান, তিনি কয়েক দিন ধরে করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতেই গোপনে চিকিৎসা নিয়ে আসছিলেন। রবিবার বিকালে নিজ বাড়িতেই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। নয়ন মিয়া (৬০) করোনা উপসর্গ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। পরে তার লাশ শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হলেও আপত্তির মুখে দাফন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তার মরদেহ নিজ গ্রাম মুরাদনগর উপজেলার ছিলমপুরে দাফন করা হয়।

ইউএনও করলেন সৎকারের ব্যবস্থা : করোনা উপসর্গে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে মারা যান তিনি। যদিও তার পাশে ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা। ঘরের মধ্যে তার মৃতদেহ রেখে আত্মগোপনে যান স্ত্রী ও সন্তানসহ স্বজনরা। এ পরিস্থিতিতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হুদা নিজেই ঘর থেকে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীর লাশ বের করেন, চিতায় ওঠান এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেন। জানা গেছে, কালিয়ার বড়দিয়া গ্রামের নির্মল রায় চৌধুরীর ছেলে বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করতেন। ঢাকা থেকে কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দুই দিন আগে বাড়িতে আসেন। এরপর আলাদা রাখা হয় বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীকে। শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর