আইনের ছাড় ও নিয়ম না মানার সংস্কৃতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণে রাজনীতি বেড়েছে। এটা রাজনৈতিকভাবে নির্দেশিত হয়েছে। করদাতাদের খেলাপি ঋণের বোঝা বইতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থঋণ আদালত, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও দেউলিয়া আইন সংশোধন দরকার। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারম্যান ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের কারণে সরকারকে একটি ব্যাংক উদ্ধার করতে হয়েছে। বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় অনেক গ্রাহক ঋণ পুনঃ তফসিল করেছেন। করোনায় খেলাপি ঋণ স্থগিত হওয়ায় ওই গ্রাহকরা খেলাপি কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খুবই দরকার। এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ অনেক আগেই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কথা বলা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে আইনি কী মডেল গ্রহণ করা হবে তাও বলা হয়নি। যদিও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফল হয়েছে। আর্থিক খাতের এই বিশ্লেষক বলেন, দেশে শক্ত আইনি কাঠামো এবং এর শক্ত প্রয়োগ না হলে অধিকাংশ ব্যাংকের ওপর বিপরীত প্রভাব পড়বে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ তুলে দিলে সবচেয়ে ভালো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে যে কোনো পরিস্থিতিতে আইনি ক্ষমতাবলে স্বায়ত্তশাসনের পরিচয় দিতে দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহির পরিচয় দরকার। ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক দরকার। সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের বাইরে ব্যাংকগুলোতে শক্ত ও স্বতন্ত্র পরিচালক দরকার। আবার শক্ত লোকও দরকার, যাতে আমানতকারী ও করদাতাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সংস্কৃতি থেকে ব্যাংকিং খাতকে বের করে আনতে শক্তিশালী লোক দিতে হবে। খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ব্যাংকের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোরতার পরিচয় দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে আইনি শর্ত মানতে হবে। ব্যাংকিং খাতকে ব্যাসেল-৩ নীতি অনুসরণ করতে হবে। কারণ ব্যাংকিং খাতে আইনের ছাড় ও নিয়ম না মানার সংস্কৃতি চলতে থাকলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন কষ্টকর হবে।