করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে আবারও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্বের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি খাতকে নড়বড়ে করে দেওয়া ভাইরাসটির নেতিবাচক প্রভাব বেশ জোরেশোরেই পড়েছে বাংলাদেশে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ দেশের ৭৫ ভাগ লকডাউন করায় কর্মহীন হয়ে পড়ে ১৩ মিলিয়ন মানুষ। সরকার ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়া বিতরণে ঘটেছে অনিয়ম। ফলে ত্রাণ কার্যক্রমে ক্ষুধার্ত মানুষের হামলার ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় করোনার বিস্তার প্রতিরোধের চেয়ে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও আয়ের সংস্থান করাই বাংলাদেশের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। নিক্কেই এশিয়ান রিভিউর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বে মারা গেছে মোট ২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৫ জন। ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম রোগী শনাক্তের পর দুই মাসেই রোগী ১৭ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। মারা গেছে ২৬৯ জন। গতকাল এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের, আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৬২ জন। অপ্রতুল সরঞ্জামকে সম্বল করেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। করোনা সংক্রমণ কমাতে সরকার বারে বারে সাধারণ ছুটি বাড়াচ্ছে। এশিয়ান রিভিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বেকারত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্রসীমার নিচে নামিয়ে আনবে। ১৭০ মিলিয়নের জনসংখ্যার ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের  হিসাবে, ১৮০টি দেশের মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হয়েছেন। এই অবস্থায় করোনার বিস্তার প্রতিরোধের চেয়ে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও আয়ের সংস্থান করাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাত। ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ বিলিয়নে। গত বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও তেলের দাম কমে যাওয়ায় এ বছর তা কমে ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে ২ শতাংশ। এদিকে এপ্রিলের শেষে প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ৩৫ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সহায়তা পেয়েছে এবং শিগগিরই অর্থ সহায়তা পাবে ১৫ মিলিয়ন মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দলের সদস্যদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের একপাশে সরিয়ে রেখে দেশের ৬৪ জেলায় ত্রাণ বিতরণে সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ করেছেন। গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত চাল চুরি করায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।