বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে আহত ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

বাঁশখালীতে ৩৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিন খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বাঁশখালী উপজেলায় গোলাগুলি ও আধিপত্য বিস্তারের বিরোধের জেরে ৩৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুই ঘটনায় তিনজন খুন হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বাহারছড়া এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় একটি এবং রাতে সাধনপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় অপর খুনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মঙ্গলবারের গোলাগুলির ঘটনায় আহত একজন গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি খুন নিয়ে বাঁশখালী উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। খুন হওয়া দুজন হলেন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ইলশা গ্রামে গোলাগুলির ঘটনায় মো. খালেদ বিন ওয়ালিদ ও ইব্রাহিম এবং আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় সাধনপুর এলাকার জহিরুল ইসলাম। নিহত জহিরুল পেশায় ট্রাকচালক। এ ছাড়া আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় রবিউল ইসলাম হিরণ ও জামাল উদ্দিন নামের আরও দুজন আহত হন। আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় নিহত জহিরুল ইসলামের স্ত্রী নুরে আয়শা ডলি বাদী হয়ে ২৩ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া মাটি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রাশিদুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রাশিদুল হক বলেন, ‘৩৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

সাধনপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুনের ঘটনা সম্পর্কে বাঁশখালী থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় মাহমুদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি প্রতিপক্ষের হামলায় ছুরিকাহত হন। তিনি ওই ঘটনায় বিচার চেয়ে রামদাশ মুন্সির হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসানের কাছে এজাহার জমা দেন। পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসান এজাহারটি নথিভুক্ত না করে সময় ক্ষেপণ করেন। এ সুযোগে প্রতিপক্ষ নেজাম উদ্দিন, মনির আহমদ, মো. জহির, সিরাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিলে সোমবার রাতে মাহমুদুল ইসলামের ওপর পুনরায় হামলা করে তার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন তার মামা জহিরুল ইসলাম। এ জের ধরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় অতর্কিত ছুরিকাঘাত করে জহিরুল ইসলামের নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহত জহিরুল ইসলামকে প্রতিবেশীরা দ্রুত গুনাগরির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠান। অ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় দক্ষিণ সাধনপুরের প্রধান সড়কের ওপর পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন আবারও সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে। তারা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে জহিরুল ইসলামের মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে আহত হন রবিউল ইসলাম হিরণ ও জামাল উদ্দিন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রামদাশ মুন্সির হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মামুন হাসানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। মামুন হাসানের বিরুদ্ধে বহু মানুষের অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসান বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। পূর্ববিরাধের সঙ্গে হত্যাকান্ডের সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়।’

অন্যদিকে বাঁশখালীর সাধনপুরের পূর্ব ইলশা গ্রামে পৃথক ইটভাটার দুই মালিক মো. নুরুল আবছার ও দিদারুল আলমের মধ্যে ব্যবসায়িক ও আধিপত্যের দ্বন্দ্ব আছে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে দুই মালিকের অনুসারীদের মধ্যে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলি হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন খালেদ ও ইব্রাহিম। খালেদ ঘটনাস্থলে মারা যান। ইব্রাহিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আরও চারজন আহত হন। আহত চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর