বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে মৃতের সংখ্যা তিন লাখ, নতুন হটস্পট ব্রাজিল

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ৩ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৪৪ লাখ। সম্প্রতি এ ভাইরাসের নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। আর রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ধেয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের সংখ্যার দিকে।

গত ডিসেম্বরে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ১১ জানুয়ারি করোনায় প্রথম মৃত্যুর কথা জানায় চীন। এর ৮২ দিন পর তা ৫০ হাজার ছাড়ায়। ১ লাখ মানুষ মারা যেতে লাগে ৯০ দিন। তারপর ১৫ দিনে আরও ১ লাখ মানুষ মারা যায়। গত ৪ মে এ সংখ্যাটা আড়াই লাখ ছাড়ায়। ১৩ মে তা ৩ লাখের কাছাকাছি পৌঁছায়। এ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নভেল করোনাভাইরাস প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে। প্রাণ হারানোর সংখ্যা এক যুক্তরাষ্ট্রেই সাড়ে ৮৩ হাজারের বেশি। সেখানে আক্রান্ত ১৪ লাখ ১০ হাজার মানুষ। আক্রান্ত ও মৃতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে কোনো দেশ নেই।

করোনায় আক্রান্ত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। এপ্রিলে এসে ভয়াবহ রূপ নেয় করোনা। মে মাসে একটু কমলেও প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

মৃতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজার ৪৯৬, ইতালিতে ৩০ হাজার ৭৩৯, স্পেনে ২৬ হাজার ৭৪৪, ফ্রান্সে ২৬ হাজার ৬৪৩, ব্রাজিলে ১১ হাজার ৬২৫, বেলজিয়ামে ৮ হাজার ৮০৭, জার্মানিতে ৭ হাজার ৬৬১, ইরানে ৬ হাজার ৬৮৫, নেদার?ল্যান্ডসে ৫ হাজার ৪৫৬ ও কানাডায় ৪ হাজার ৯৯৩ জন মারা গেছেন। তবে লাখো মৃত্যুর খবরের মধ্যে স্বস্তির খবর এটাই যে, কভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে এরই মধ্যে ১৫ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ এখন সুস্থ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ১০৮টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের কাজ চলছে। এর মধ্যে আটটি ভ্যাকসিন প্রথম ধাপ অর্থাৎ মানবদেহে প্রয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।

এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা দিলেও করোনাভাইরাস তার আগ্রাসী রূপ দেখাতে শুরু করেছে এশিয়ায়। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ২ হাজার ৩০০ মানুষ। শুধু ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ নয়, আক্রান্ত বেড়েছে করোনা প্রতিরোধে সফল মনে করা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও সিঙ্গাপুরেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনার নতুন কেন্দ্র হতে পারে এশিয়া। এ অঞ্চলের দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার কারণে প্রাণ হারাতে পারে লাখ লাখ মানুষ।

মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। উহানে আবার করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় নতুন করে সেখানে তা বিস্তার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর তাই আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব বাসিন্দার করোনা পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার।

নতুন হটস্পট ব্রাজিল : করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু ?হু করে বাড়ছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। বলা যায়, নতুন হটস্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিল। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতের রেকর্ড হয়েছে দেশটিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে ৮৮১ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে ১২ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮৯ জন। শুধু ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ এসেছে ৯ হাজার ২৫৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যার দিকে দিয়ে বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের পরই ব্রাজিলের অবস্থান। ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে প্যান আমেরিকান স্বাস্থ্য সংস্থার কমিউনিকেবল রোগ বিভাগের প্রধান মার্কোস এসপিনাল বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে ব্রাজিলের যে পরিস্থিতি তা উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রাজিলে এ সংখ্যা আরও বেশি। গত সপ্তাহে প্রকাশ পাওয়া গবেষণার লেখক ডোমিংগো আলভেস বলছেন, হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়া মানুষের পরিসংখ্যান বলছে দেশে প্রকৃত সংক্রমণের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি।

আক্রান্তে দ্বিতীয় অবস্থানে রাশিয়া : বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে রাশিয়া। প্রথম দিকে রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও এখন দেশটি অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরই অবস্থান করছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লাখ ৩২ হাজার ২৪৩টি কেস শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে এ সময় পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ১১৬ জন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই রাশিয়ায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে এরই মধ্যে ৫৬ লাখ মানুষের দেহে করোনার পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে মৃত্যুহার কম। রাশিয়ায় গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৮৯৯ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ১০৭ জন। এক দিন আগের হিসাব অনুযায়ী, নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৫৬ ও মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের।

ঈদের সময় সৌদি আরবে পাঁচ দিনের কারফিউ : সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ঈদের সময়ও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে চলতি মাসের শেষের দিকে পাঁচ দিনের ঈদের ছুটিতে দেশব্যাপী পুরোটা সময় কারফিউ জারি করা হবে।

উপসাগরীয় অঞ্চলে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সৌদি আরব। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সৌদি প্রেস এজেন্সির দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী পুরোপুরি লকডাউন আরোপ করা হবে। রমজান শেষে ঈদ এ সময়ের মধ্যেই পড়ছে। দেশটিতে মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় বেশির ভাগ অঞ্চল পূর্ণ লকডাউনের আওতায় চলে গিয়েছিল। গত মাস থেকে সরকার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করে। দেশটিতে শপিং মল ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকান খুলে রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও মক্কার মতো শহর বন্ধ রাখা হয়েছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও কিছু কিছু জায়গায় সংক্রমণ বাড়ছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ২৬৪ জন মারা গেছেন। করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ৪২ হাজার ৯২৫। সেরে উঠেছেন ১৫ হাজার ২৫৭ জন।

প্রসঙ্গত, গত মার্চে ওমরাহ বাতিল করে সৌদি আরব। চলতি বছরের হজ প্রক্রিয়া চালু করা হবে কিনা, এর ঘোষণা এখনো দেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ লাখ মানুষ সৌদি আরবে হজ পালন করতে যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর