শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতিকাফ আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের বড় মাধ্যম

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

ইতিকাফ আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের বড় মাধ্যম

আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর এই ইবাদত আদায় করার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমন নামাজ একটি ফরজ ইবাদত, রোজা একটি ফরজ ইবাদত, জাকাত একটি ফরজ ইবাদত, হজ একটি ফরজ ইবাদত, তেমনিভাবে ইতিকাফ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ  ইবাদত। আর রমজান মাস ইবাদত করার মাস। কারণ রমজান মাসে ইবাদত করার দ্বারা অন্যান্য মাস থেকে দিগুণ বা বহুগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাস হচ্ছে গুনাহ মাফের মাস। আর ইতিকাফ গুনাহ মাফ করার অন্যতম মাধ্যম। ইতিকাফের মাধ্যমে একজন মুমিন-মুসলমান গুনাহমুক্ত জীবনধারণ করে আপন প্রভুর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে সামর্থ্যবান হয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি জান্নাতে যাওয়ার আশা করতে পারে।  কারণ আমরা দেখি!  ইতিকাফকারী ব্যক্তি নিজের পার্থিব সব ব্যস্ততা ও কাজ পরিত্যাগ করে আল্লাহর দরবার তথা মসজিদে চলে যায়। আল্লাহ ছাড়া পার্থিব কাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখে একমাত্র আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। ৯-১০ দিনের এই সংক্ষিপ্ত সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতার সঙ্গে আল্লাহর জিকির, দোয়া ও ইবাদতে নিয়োজিত থেকে আল্লাহর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং নৈকট্য লাভ করে। যতক্ষণ মানুষ ইতিকাফে থাকে, তার পানাহার, ওঠা-বসা, ঘুমানো, জেগে থাকা বরং প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদতের মধ্যে গণ্য হয়। মনে হবে ইতিকাফকারী ব্যক্তি দুনিয়াবি যাবতীয় কাজ ছেড়ে আল্লাহর ঘরে এসে বলছেন, হে আমার প্রভু, আমি এসে পড়েছি, আমায় ক্ষমা করে দিন, যতক্ষণ না আপনি আমায় ক্ষমা করছেন আমি আপনার দরবার ছাড়ছি না। এখন একটি বিষয় লক্ষ্য করুন, যে ব্যক্তি তার পার্থিব যাবতীয় কাজ ছেড়ে একমাত্র তার প্রভুর সান্নিধ্য গ্রহণ করার জন্য আত্মনিয়োগ করে এবং টানা ৯-১০ দিন মসজিদে এসে পড়ে থাকে, তখন আল্লাহতায়ালা (সব কিছু জানেন এবং বোঝেন) তার পরেও ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন এই ব্যক্তি এখানে (মসজিদে) কী জন্য এসেছে? ফেরেশতারা উত্তরে বললেন- হে আমাদের প্রতিপালক! এই ব্যক্তি তার জীবনের গুনাহ মাফ করার জন্য এখানে এসেছে। তখন আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে ফেরেশতাদের বলেন, সে তার গুনাহ মাফ করার জন্য আমার দরবারে এসে পড়ে আছে, যাও আমি তার অতীত জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিলাম। সুবহানআল্লাহ। এভাবে একজন ইতিকাফকারী রমজান শেষে তার জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিয়ে একজন মাসুম ব্যক্তির মতো মসজিদ থেকে বের হয়। সুবহানআল্লাহ। প্রিয় পাঠক! এই ইতিকাফের ফজিলত যদি লেখতে যাই তাহলে অনেক লেখতে হয়। সংক্ষেপে একটি হাদিস দেখুন।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ইতিকাফকারী গোনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তার সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে থাকে, যেভাবে তিনি নিজে করতেন। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত) অর্থাৎ সে ইতিকাফের বাইরে থাকতে যেসব ভালো কাজ আনজাম দিত, যা সে ইতিকাফ থাকার কারণে করতে পারছে না, সেসব আমলের সাওয়াব আগের মতোই লিপিবদ্ধ হতে থাকে।

মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সব মুসলিম ভাই-বোনকে ইতিকাফের তামাম ফজিলত ও বরকত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর