শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাবার কবরেই চিরনিদ্রায় আনিসুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাবার কবরেই চিরনিদ্রায় আনিসুজ্জামান

শেষ শ্রদ্ধা : রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গতকাল সকালে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গতকাল সকালে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে দাফন করা হয়েছে। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে তাঁর বাবার কবরে সমাহিত করা হয়।

আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান সাংবাদিকদের জানান, আল মারকাজুল ইসলামীর স্বেচ্ছাসেবীরা শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সিএমএইচ থেকে তার বাবার মৃতদেহ গ্রহণ করেন। পরে কভিড-১৯ নীতিমালা অনুযায়ী সেখানেই গোসল-কাফনের ব্যবস্থা হয়। এর পর সিএমএইচ থেকে তারা শবাধার আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে জানাজা শেষে সোয়া ১০টার পর সমাহিত করা হয়।

দাফনের আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। গার্ড অব অনার দেন জেলা প্রশাসনের পক্ষে ধানমন্ডি রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক আবদুর রহমান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বাবর আলী মীর উপস্থিত ছিলেন। আনন্দ জামান সাংবাদিকদের জানান, বেলা পৌনে ১১টায় তার বাবার দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দাফনের সময় পরিবারের পক্ষে তিনি, চাচা আখতারুজ্জামান এবং ভগ্নিপতি আজিমুল হক উপস্থিত ছিলেন। দাফনের আগে আজিমপুর কবরস্থানেই সীমিত পরিসরে নামাজে জানাজা হয়। জানাজা পড়ান মাওলানা ফরিদউদ্দিন আহমেদ। প্রয়াত আনিসুজ্জামানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে কুলখানির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আজিমপুরে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় আনন্দ জামান তার বাবার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা ও নানা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। গত ১৪ মে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আনিসুজ্জামানকে চিকিৎসার জন্য ২৭ এপ্রিল ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃৎপি , ফুসফুস ও কিডনিতে সমস্যা ছিল। অবস্থার অবনতি হলে ৯ মে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পারিবারিক সূত্র জানায়, মৃত্যুর পর অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নমুনা পরীক্ষায় তাঁর দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এর আগে ১০ মে হাসপাতালে তাঁর করোনা পরীক্ষায় ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি।

দোয়া অনুষ্ঠান : অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ইচ্ছা ছিল তাঁর জানাজা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের উদ্যোগে গতকাল দোয়া অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানে আনন্দ জামান পিতা আনিসুজ্জামান জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে কারও মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি কারও কোনো পাওনা থাকলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।

কলকাতা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শুক্রবার দুপুরে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রকাশিত শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষা ও সাহিত্য জগতে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। আমি আনিসুজ্জামানের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’ টুইট করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা শোক জ্ঞাপন করে জানান, ‘পদ্মভূষণ সম্মাননাপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তিনি আমাদের এ অঞ্চলের একজন প্রসিদ্ধ বিদ্বজ্জনের মধ্যে একজন। একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষিত মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।’ ১৯৩৭ সালে কলকাতায় জন্ম অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের। তাঁর পৈতৃক ভিটা ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে। যদিও ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় তাঁর পরিবার বাংলাদেশে চলে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর