শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আক্রান্ত ছাড়াল ২০ হাজার

এক দিনে ১২০২ জন আক্রান্ত, মৃত আরও ১৫

বিশেষ প্রতিনিধি

আক্রান্ত ছাড়াল ২০ হাজার

এক দিনে রেকর্ড ১ হাজার ২০২ জনের মধ্যে নতুন করে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৫-তে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৫ জন। তার মধ্যে সাতজন পুরুষ, আটজন নারী। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯৮-তে। দেশে কভিড-১৯ রোগী প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সে হিসাবে ৬৯তম দিনে এসে শনাক্ত ২০ হাজার ছাড়াল। গতকাল দুপুরে কভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, দেশে কভিড-১৯ রোগী প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সে হিসাবে ৬৯তম দিনে এসে শনাক্ত ২০ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৪১টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৯টি, এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮২টি। এর মধ্যে ঢাকার ভিতরে ২০টি আর ঢাকার বাইরে ২১টি ল্যাব রয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ১ লাখ ৬০ হাজার ৫১২টি। সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৭৯ জন। সব মিলে এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৮২ জন সুস্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সবশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, দেশে মোট আক্রান্তের মধ্যে ঢাকা বিভাগের রোগীর হার কমে এখন ৭৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছে। আগে তা ছিল ৮০ শতাংশের বেশি। ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা দেশের মোট রোগীর ৫৮ দশমিক ১১ শতাংশ। মহানগরী ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় রোগীর সংখ্যা দেশের মোট আক্রান্তের ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দেশের মোট আক্রান্তের ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ময়মনসিংহ বিভাগের, ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ রংপুর বিভাগের, ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ সিলেট বিভাগের, ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ রাজশাহী বিভাগের ও ১ দশমিক ১০ শতাংশ বরিশাল বিভাগের। বুলেটিনের শুরুতেই জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলা হয়, বাংলাদেশ একজন বাতিঘরকে হারাল। এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো তার সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে এক দিনে নতুন করে আরও ৬১ জন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫১ জন নগরের ও ১০ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের চারটি ল্যাবে ৪২৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৭৬ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬১ জন চট্টগ্রাম জেলার, ১৫ জন বিভিন্ন জেলার। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলায় চিকিৎসক-পুলিশ-সাংবাদিকসহ নতুন করে ৬১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে দুজন নারী চিকিৎসক আছেন।

রাজশাহী : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ৬৮ দিন পর রাজশাহী বিভাগীয় শহরের ভদ্রা এলাকার ৫০ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই নারী শনাক্ত হন। শুক্রবার ৯৪টি নমুনা নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়। ত্রুটি থাকায় ৩৮টি নমুনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। বাকি ৫৬টি নমুনার মধ্যে চারটির রিপোর্ট এসেছে পজিটিভ। ৫২টি নেগেটিভ। নতুন শনাক্ত হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি নওগাঁয়। একজনের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীতে। রাজশাহী জেলায় ১২ এপ্রিল প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ জন শনাক্ত হওয়ার পর ১০ দিন নতুন করে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় গাজীপুর থেকে আসা এক দম্পতির করোনা শনাক্ত হয়। এতে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৯। কিন্তু পরদিনই শহরে একজন করোনা শনাক্ত হয়ে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়াল ২০-এ। বগুড়া : জেলায় আক্রান্ত এক যুবকের সংস্পর্শে গিয়ে তার মা ও এক প্রতিবেশী নারী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আক্রান্ত দুই নারীর বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামে। তাদের দুজনেরই বয়স ৫০ বছর। গতকাল বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, শিবগঞ্জের এক যুবক নারায়ণগঞ্জ থেকে ৭ মে বাড়ি ফেরেন। ১০ মে নমুনা পরীক্ষায় তিনি করোনা পজিটিভ হলে পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। পরে ওই যুবককে আইসোলেশন ইউনিট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লকডাউনে থাকা অবস্থায় পরবর্তী সময়ে ওই যুবকের মা ও প্রতিবেশী এক নারীর মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে ১১ মে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরীক্ষা শেষে ১৪ মে রাতে তারা করোনাভাইরাসে শনাক্ত হন। নতুন করে দুই নারী আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়ায় মোট ৫৯ জন করোনা পজিটিভ হলেন। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ১০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নওগাঁ : জেলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য, এক চিকিৎসকসহ নতুন করে আরও ১০ জন কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন পুলিশ সদস্যসহ সদর উপজেলায় চারজন, পত্নীতলা উপজেলায় দুজন পুলিশ সদস্য, বদলগাছী উপজেলায় একজন, রানীনগর উপজেলায় একজন চিকিৎসক, নিয়ামতপুর উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ-ফেরত একজন ও সাপাহার উপজেলায় ঢাকা-ফেরত একজন। এ ১০ জন নিয়ে নওগাঁয় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮০-তে। উল্লেখ্য, নওগাঁ সদর উপজেলায় আক্রান্তের ঘটনা এই প্রথম।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় নতুন করে দেবিদ্বারে ২৫ জনসহ জেলায় ২৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মহানগরীতে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলায় থানার ১৮ সদস্যসহ ১০২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৮ জন। গতকাল জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানান, গতকাল সাতজনসহ সুস্থ হয়েছেন মোট ৪৬ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন নয়জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাংকের নৈশপ্রহরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পৌর এলাকার পূর্ব পাইকপাড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ওই কর্মচারীর বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। বৃহস্পতিবার বিকালে আসা রিপোর্টে ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। জেলায় এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩। জেলা সদরে আক্রান্ত বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭-এ।

ফেনী : জেলায় নতুন করে আরও দুজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, আক্রান্তের মধ্যে একজন ফেনী সদর উপজেলার ও অন্য জনের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলায়। এ নিয়ে ফেনীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আক্রান্তের মধ্যে একজন (৩০) ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মচারী। তিনি ফেনী শহরে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। অন্যজনের (৩৫) বাড়ি ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ সতেরর বাসিন্দা। তিনি মাইক্রোবাসচালক ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী। দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন এক দম্পতি করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এ দুজন দিনাজপুর সদরের উথরাইল ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকার রথিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। কয়েকদিন আগে তারা ঢাকা থেকে এসেছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮। সিভিল সার্জন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১ জনের নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজনের নমুনায় করোনা পজিটিভ ও ১২৯টি নমুনার ফল নেগেটিভ এসেছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫৫টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৩৬টি নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত জেলায় দিনাজপুর সদরে ১৬, কাহারোলে সাত, বিরলে পাঁচ, বোচাগঞ্জে চার, পার্বতীপুরে পাঁচ, ফুলবাড়ীতে এক, নবাবগঞ্জে চার, হাকিমপুরে দুই, বিরামপুরে চার, ঘোড়াঘাটে চার, চিরিরবন্দরে এক, বীরগঞ্জে পাঁচজন শনাক্ত হয়েছেন।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর