সোমবার, ১৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মহিমান্বিত রাত তালাশে আমাদের করণীয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মহিমান্বিত রাত তালাশে আমাদের করণীয়

শবেকদর বা লাইলাতুল কদর আমাদের দেশে ব্যাপক পরিচিত শব্দ। যাকে নতুনভাবে পরিচয় করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কোন ইবাদত কখন করতে হয় তা তারা ভালোভাবেই জানেন। এখন চলুন মহিমান্বিত রাত তালাশে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেই। পবিত্র শবেকদর বা মহিমান্বিত রাতটি পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। তবে এই মহিমান্বিত রাতটি অনির্দিষ্ট এবং তা গোপন রাখা হয়েছে। এতে রয়েছে মহান রবের অনেক বড় হেকমত। কারণ, যদি রাতটির দিন-ক্ষণ নির্দিষ্ট থাকত আর মানুষ রাত জেগে এর ফজিলত ও মহিমা লাভের জন্য তৎপর না হতো, তাহলে আল্লাহর এত বড় নেয়ামতের প্রতি অবহেলা করার শাস্তি হতো অকল্পনীয়। কাজেই শবেকদর অনির্দিষ্ট ও গোপন থাকার মধ্যেও মানব জাতির জন্য বহু কল্যাণ নিহিত আছে। তবে উম্মতের ওপর বিষয়টি সহজ করণার্থে আমাদের নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) শবেকদর তালাশের জন্য সম্ভাব্য দিনক্ষণ বাতলে দিয়েছেন। যেমন (১) এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর তালাশ কর।’ অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯তম রাত। এবং শবেকদর তালাশের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম মদিনার জীবনে বহু বার রমজানে ইতিকাফ করেছেন। কাজেই শবেকদর তালাশের সবচেয়ে উত্তম পন্থা মসজিদে গিয়ে পুরুষদের এবং বাসগৃহে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে মহিলাদের ইতিকাফ করা। (২) অন্য হাদিছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি শবেকদর তালাশ করতে গিয়ে (রমজানের) প্রথম দশক ইতিকাফ করেছি। অতঃপর মধ্যম দশকেও ইতিকাফ করেছি। এরপর স্বপ্নে কেউ এসে আমাকে বলল, এটি শেষ দশকে। অতএব যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে প্রথমে ইতিকাফ করেছে সে যেন শেষ দশকেও ইতিকাফ করে। (মিশকাত : ১৯৮৬)। (৩) কোন রাতটি শবেকদর তার একটি পরিচয় বা লক্ষণ বলা হয়েছে, পরের দিনের সূর্যের কিরণ উদয়ের সময় নিস্তেজ হবে। মিশকাত : ১৯৮৭। তাফসিরবিদরা এর ব্যাখ্যা এমন করেছেন যে, কদরের রাতে যে অগণিত অসংখ্য ফেরেস্তা আল্লাহর রহমত ও শান্তির সওগাত বিতরণ করেছেন, পরদিন ভোরে তারা আকাশে ফিরে যেতে ভিড়ের আবছা ছায়ায় সূর্যকে নিষ্প্রভ দেখা যায়। এখন আমাদের এমন প্রশ্ন হতে পারে, যাদের মসজিদে রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করার সুযোগ নেই তারা কীভাবে এই মহিমান্বিত রাতের ফজিলত লাভ করতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর এমন হতে পারে যে, রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। এবং তার অন্যতম  লক্ষ্য হলো শবেকদর তালাশ করা। আরেক প্রকারের ইতিকাফ আছে, যা মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ইতিকাফে দশ দিনের শর্ত নেই। অল্প সময়ের জন্যও হতে পারে। কাজেই শবেকদর তালাশকারী বন্ধুরা দিনের বেলা সম্ভব না হলেও অন্তত শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে কাটাতে পারেন। (৪) এ সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইছ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) পল্লীগ্রামে আমার বাড়ি। আমি সেখানে বাস করি এবং আলহামদুলিল্লাহ সেখানে নামাজও পড়ি। সুতরাং আমাকে রমজানের একটি নির্দিষ্ট রাতের কথা বলে দিন, যাতে আমি (শবেকদর তালাশের জন্য) আপনার মসজিদে আসতে পারি। তখন হুজুর (সা.) বললেন, তুমি তেইশে (রমজান) রাতেই এসো। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তোমার পিতা তখন কি করতেন? সে উত্তরে বলল, তিনি যখন আসরের নামাজ পড়তেন তখন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করতেন। অতঃপর (প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতীত) ফজর নামাজ না পড়া পর্যন্ত কোনো কাজে মসজিদ হতে বের হতেন না। যখন ফজর পড়তেন মসজিদের দরজায় আপন বাহনটি প্রস্তুত পেতেন এবং সেই বাহনে চড়ে আপন পল্লীতে চলে যেতেন। (মিশকাত : ১৯৯৩)।

(৫) অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! বলুন, যদি আমি বুঝতে পারি ‘শবেকদর’ কোন রাত্রিতে, তখন আমি কী বলব? তিনি বললেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা-ফু আন্নি।’ অর্থ : ‘প্রভু হে! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’( ইবনু মাজা, তিরমিজি)।

প্রিয় পাঠক! আসুন! আজ রাতটি বেজোড় রাতের একটি। যারা লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্যে মসজিদে এতিকাফে বসেছেন তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু আমরা যারা সেই সুযোগ পাইনি। চলুন লাইলাতুল কদর তালাশে রাতভর ইবাদত করি। প্রভুর সান্নিধ্য পাওয়ার আমলে নিজেদের ব্যস্ত রাখি। রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভি উপস্থাপক

সর্বশেষ খবর