মহামারী আকারে বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত তিন দিনের হিসাব বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৬১৮ জন মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬৫ ও ১৯ হাজার ৮৯১ জন, ব্রাজিলে ৪৮৫ ও ৭ হাজার ৯৩৮ জন, ফ্রান্সে ৪৮৩ ও ২০৪ জন, মেক্সিকোতে ২৭৮ ও ২ হাজার ১১২ জন, যুক্তরাজ্যে ১৭০ ও ৩ হাজার ৫৩৪ জন, ভারতে ১৫৪ ও ৫ হাজার ৫০ জন, ইতালিতে ১৪৫ ও ৬৭৫ জন, পেরুতে ১২৫ ও ৩ হাজার ৭৩২ জন, কানাডায় ১০৩ ও ১ হাজার ১৩৮ জন। এ ছাড়া এদিন রাশিয়ায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয় ও ৯ হাজার ৭০৯ জন আক্রান্ত হন। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে এদিন ১ জনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬ জন। বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ৩ লাখ ১৯ হাজার এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট প্রায় ৫০ লাখ।
আক্রান্ত কমছে রাশিয়ায় : রাশিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। দেশটিতে গতকাল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৯২৬ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৮। গত তিন দিনে রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। গত ১৫ মে থেকে টানা কয়েকদিন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২ হাজার ৭২২ জন। দেশটিতে এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭০ হাজার ২০৯ জন। রাশিয়ায় বর্তমানে করোনার অ্যাকটিভ কেস ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭টি। তবে এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ২ হাজার ৩০০ জন।করোনা মোকাবিলায় সফল যেসব দেশ : মহামারী করোনায় বিশ্বের প্রতিটি মানুষ চরম এক মৃত্যু আতঙ্ক নিয়ে দিন যাপন করছে। এ অবস্থায় আক্রান্ত ও সুস্থতার হারের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমাজতান্ত্রিক দেশ ভিয়েতনাম এক্ষেত্রে সবচেয়ে সফল। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩২০ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৬০ জনই এখন সুস্থ। কেউ মারা যায়নি। চিকিৎসা চলছে বাকি ৬০ জনের। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভিয়েতনাম সরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ ও রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার যে কর্মসূচি বহুদিন ধরে চর্চা করে আসছে করোনা প্রতিরোধে সেটি বড় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। সংক্রমণ ছড়ানোর আগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো যখন নভেল করোনাভাইরাস মহামারী হিসেবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েনি, তার আগেই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভিয়েতনাম গোটা দেশ লকডাউন করে দেয়। এতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সফল হিসেবে বিবেচিত আরেকটি নাম হলো তাইওয়ান।
চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও এই দ্বীপ অঞ্চলটির সরকার জোরালো সব পদক্ষেপ নিয়ে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। সেখানে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত মাত্র ৪৪০ জন। তাদের মধ্যে ৩৯৫ জন সুস্থ এবং ৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় সফল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার নাম। দেশটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগী ৭ হাজার। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৯৮ জন, যা তুলনামূলক কম। এ ছাড়া দেশটির ৬ হাজার ৩৬৩ জন কভিড-১৯ রোগী এখন সুস্থ। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডও আছে এই তালিকায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ৪৩৩ জন এখন সুস্থ। মারা গেছেন ২১ জন। বাকি ৪৫ জনের চিকিৎসা চলছে। চীনের উহানে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানো প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম থাইল্যান্ড। তবে দেশটিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা কম। গতকল থাইল্যান্ডে নতুন করে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি এবং কেউ মারাও যাননি। সব মিলিয়ে দেশটিকে সফল বলা হচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর উহানে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এর দুই সপ্তাহ পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে কভিড-১৯ রোগী ধরা পড়ে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ২৮ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৬ জন মারা গেলেও চিকিৎসা শেষে এখন ২ হাজার ৮৫৬ জন সুস্থ। এদিকে চীনের পর করোনার প্রাদুর্ভাব বেশ জোরালোভাবে শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। কিন্তু দেশটি করোনার বিস্তার রোধে অনেকটা সফল হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ কিছুটা ছড়িয়ে পড়ায় বিপদে পড়েছে দেশটি। সেখানে আক্রান্ত ১১ হাজারের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার এখন সুস্থ।
করোনা মোকাবিলায় সফল অর্থাৎ সবচেয়ে কম প্রাণহানির দিক দিয়ে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবস্থল চীনের নামও রয়েছে উপরের দিকে। ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও দেশটিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৯৪৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা শেষে এখন ৭৮ হাজার ২২৭ জন সুস্থ।