মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নুরুল মজিদ হুমায়ুন নতুন মাত্রায় নিতে চান শিল্পকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নুরুল মজিদ হুমায়ুন নতুন মাত্রায় নিতে চান শিল্পকে

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে দেশের শিল্প খাতকে নতুন মাত্রায় নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বেসরকারি খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ইশতেহার বাস্তবায়নই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তাঁর মতে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সাজাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে শিল্পকে আরও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এরই মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বেকার সমস্যা নিরসনে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী। পাশাপাশি কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়াতে সার কারখানাগুলোর আধুনিকীকরণ ও নতুন ফ্যাক্টরি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তিনি।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে সার কারখানাগুলোর আধুনীকিকরণ জরুরি। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। ঘোড়াশালে একটি বিশাল সার কারখানা হচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার কোটি ব্যয়ে প্রস্তাবিত এই কারখানাটি স্থাপনের জন্য জাপানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার, ফেঞ্চুগঞ্জসহ সবগুলো সারকারখানা চালু আছে। ফলে সারের কোনো সংকট নেই। উপরন্তু সার উৎপাদনের পর সেগুলো যাতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য বাফার গোডাউন নির্মাণেও টেন্ডার হয়ে গেছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ চিনিকলগুলোও অধুনিকীকরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বেশিরভাগ চিনিকলের মেশিনপত্র খুব পুরনো। এগুলোতে নতুন মেশিনারিজ স্থাপন করে সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও নর্থবেঙ্গল চিনিকলের আধুনিকীকরণে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ১৬টি চিনিকল আছে। এগুলোর অধীনে অনেক জায়গা আছে। মাত্র ৩ মাস আখ চাষ করার পর এগুলো পতিত থাকে। আমরা এসব জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এ ছাড়া এসব চিনিকলগুলো যাতে আর লোকসানি না হয় সে লক্ষ্যে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে কলগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু হয়েছে। অ্যালকোহলের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধী স্যানিটাইজার বানানোতে ওই কোম্পানিটি কাজ করছে। ভবিষ্যতে এটির কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। মর্ডানাইজেশনের জন্য এটিরও টেন্ডার হয়ে গেছে। নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা আছে, যাতে দেশেই গাড়ি উৎপাদন হয়। সে লক্ষ্যে আমরা স্থানীয়ভাবে গাড়ির উপকরণ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন-বিএসইসি’র কার্যক্রমও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে আমরা এখন দেশেই গাড়ি অ্যাসেম্বলিং করছি জাপানের মিটশুবিসির সহায়তায়।

বিসিক শিল্পনগরীগুলোকেও প্রকৃত শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, জেলায় জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানাগুলো যাতে বিসিকে গড়ে ওঠে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বগুড়ায় হালকা প্রকৌশলী ও এসএমই শিল্পের প্রচলন রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে- সেখানে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং যেগুলো আছে, তাদের প্রত্যেককে বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট দেওয়ার।

মুন্সীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লী গড়ে তোলার পাশাপাশি মুদ্রণ শিল্প পল্লীর কাজ চলছে। এ ছাড়া জাহাজ ভাঙা শিল্প বিকাশেও কাজ চলছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, কিয়োটা প্রটোকল মেইনটেইন করে সীতাকুন্ডে যাতে পরিবেশবান্ধব শিপব্রেকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ১৯৫০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ এবং মাতা নূর বেগম। বাবা ছিলেন বৃহত্তর ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলর ট্রাইব্যুনালের সভাপতি। পিতামহ অবিভক্ত বাংলার ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর স্ত্রী নাদিরা মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এমএসএস এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ষাটের দশকে আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী আন্দোলনে এবং পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সব আন্দোলনে ছাত্রনেতা হিসেবে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে যুবলীগকে পুনর্গঠনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর নির্দেশে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের নেতৃত্বে যুবছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং তিনি যুবছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সারা দেশের নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাঁর ভিশন সম্পর্কে এক কথায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পুরনো শিল্পকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়িয়ে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর