মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পাপমুক্ত জীবন গঠনে মাহে রমজানের শিক্ষা

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

পাপমুক্ত জীবন গঠনে মাহে রমজানের শিক্ষা

দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে মানবকল্যাণের মাস পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজানের মতো মানুষের মাঝে এত সুন্দর পরিবেশ দেখা যায় না অন্যান্য মাসে। আবার ১১ মাস পর দেখা হবে রহমত, মাগফিরাত  ও নাজাতের এই পবিত্র মাসের।  এই অস্থায়ী দুনিয়া যতকাল থাকবে ততকালই রমজান মাস আসবে মানুষের কল্যাণের জন্য। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেকে যাবতীয় গুনাহমুক্ত করার একটি বরকতময় মাস। যারা গুনাহগার ও পাপী বান্দা তাদের জন্য রমজান মাস প্রতি বছর একটি সুবর্ণ  সুযোগ নিয়ে আসে; যেন নিজেদের সমস্ত পাপ ও গুনাহমুক্ত করানো যায়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য সেই সুযোগটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু রোজা রাখলেই এই পাপ ও গুনাহ থেকে পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে একান্ত মনে তওবাও করতে হবে এই বলে যে, আমি জীবনে আর কখনো অন্যায়-অত্যাচার করব না, মিথ্যা বলব না কিংবা কোনো প্রকার খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকব না। যে অন্যায় হয়ে গেছে তার জন্য আমি খুবই লজ্জিত। তাহলেই আল্লাহ তার আগের সব পাপ ও গুনাহ মাফ করবেন ইনশাআল্লাহ। এভাবে পবিত্র রমজান মাসে পাপ ও যাবতীয় গুনাহমুক্ত জীবন ধারণ করে মৃত্যু পর্যন্ত থাকতে পারলেই আমার জীবন সফল। আমার সৃষ্টির মাকসাদও পূর্ণ সফল। মুমিন বান্দার মাহে রমজানে ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে পাকে আছে, যে মুমিন বান্দা রমজান মাসে দিনে রোজা রেখেছে এবং বেশি বেশি এবাদত করেছে, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অতীত এবং ভবিষ্যতের সব গুনাহ মাফ কওে দেবেন। সুবহানাল্লাহ। মাহে রমজানের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে নিজেকে সব ধরনের অনৈতিক ও নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখা। এই কাজ ছাড়া  মানুষের চরিত্র গঠন হয় না। রোজা বলতে শুধু দিনের বেলা না খেয়ে থাকাকে বুঝায় না। দিনের বেলা না খেয়ে থাকার নাম রোজা নয়। এটাকে বরং শুধু উপবাস বলা যেতে পারে। প্রকৃতভাবে রোজার অর্থ হলো একজন রোজাদার সব ধরনের অন্যায় ও পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন। যে শুধু দিনের বেলা না খেয়ে থাকল কিন্তু মিথ্যা কথা বলল, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করল, ওজনে কম দিল, মানুষের অধিকার কেড়ে নিল, করোনাভাইরাসের এই দুর্জোগকালে ইয়াতিম, গরিব অসহায় মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করল, তাদের হক নষ্ট করল, অসহায় মানুষের সঙ্গে অন্যায়-অবিচার করল, খাদ্যে ভেজাল দিল, খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক মুনাফা করল, মদ্যপান, জুয়া, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি গর্হিত অপরাধ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে সারাজীবন মুক্ত রাখতে পারল না, দিবানিশি আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে অভ্যস্ত, ইত্যাদি। সেই মানুষের পক্ষে  দিনের বেলা না খেয়ে থাকাটা শুধু বেহুদা বা  অনর্থক ছাড়া আর কিছুই না। পাঠক বন্ধুরা একটু চিন্তা করে দেখুন! সে  না খেয়ে থাকল কিন্তু সুযোগ পেলেই অন্যায়, অনাচারসহ যাবতীয় পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ল। তাহলে এ ধরনের ইবাদত বা রোজার দ্বারা সে কি কোনো ছাওয়াবের আশা করতে পারে? না পারে না। হাদিসের ভাষ্য মতে, যে রোজা রাখল অথচ মিথ্যাচার ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারল না, তাহলে তার এই ধরনের রোজার কোনোই প্রয়োজন নেই। বরং আমাদের সব মুসলমানদের মনে-প্রাণে বিশ্বাস রাখতে হবে। মাহে রমজান যে উদ্দেশ্য, সংযম ও আত্মশুদ্ধির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিবছর আমাদের কাছে আগমন করে থাকে, সেই উদ্দেশ্য অর্জন করে যাবতীয় পাপমুক্ত জীবন ধারণ করে পূতঃপবিত্র চরিত্র গঠন করলেই রোজা ও মাহে রমজানের আগমন সার্থক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। মহান রব্বুল আলামিন আমাদেরকে যাবতীয় পাপ ও গুনাহমুক্ত জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর