বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ধেয়ে আসছে আম্ফান

এক দশকে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়, ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা, আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে ২২ লাখ মানুষকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধেয়ে আসছে আম্ফান

ভোলায় গতকাল নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয় স্থানীয়দের -এএফপি

মহাপ্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। ইতিমধ্যে এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানতে পারে উপকূলে। আম্ফানের কারণে পাঁচ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রলয় থেকে বাঁচাতে উপকূলীয় অঞ্চলের ২২ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, একদিকে করোনাভাইরাস, আরেকদিকে নতুন বিপদ আমাদের সামনে এসেছে। পরিস্থিতি দেখে বুধবার সকাল ৬টায় মহাবিপৎসংকেত দেওয়া হতে পারে। এরপর আর কাউকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া কঠিন হবে।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন হচ্ছে আম্ফান। এটিকে সুপার সাইক্লোন বলার কারণ হচ্ছে, ঝড়ের বাতাসের গতি যদি ২২১ কিলোমিটারের বেশি হয় তাহলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলে। এখন আম্ফানের বাতাসের গতি আছে ২২৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর আগে সবচেয়ে বড় ঝড় ছিল সিডর। সিডরের গতি ছিল ২২৩ কিলোমিটার। তবে সিডরের এই গতি ছিল যখন এটি উপকূলে আছড়ে পড়ে সেই সময়ের। আমরা আশা করছি ২২৫ থেকে ২৪৫  কিলোমিটার বেগের এই আম্ফান যখন উপকূলে আঘাত হানবে তখন তার গতি কিছুটা কমে যাবে। এতে এটি সিডরের চেয়ে কম শক্তিশালী হতে পারে। তবে পুরোটাই আমাদের পর্যবেক্ষণ। প্রাকৃতিক বিষয় এত নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আম্ফান মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সে সময় বাতাসের গতি কিছুটা কমে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার হতে পারে। আম্ফানের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান, সুপার সাইক্লোনটি এখন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। সবচেয়ে কাছে আছে মোংলা ও পায়রা। অর্থাৎ এই বন্দরের কাছাকাছি আসবে আগে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে চার ধাপে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর মধ্যে সতর্কসংকেত, ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা, ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা এবং জেলেদের জন্য সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতায় বলা হয়, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতায় বলা হয়, আম্ফান অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার  বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। জেলেদের জন্য সতর্কতায় বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে ২ লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সকলকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে আসার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ দুর্যোগ পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন।

প্রস্তুত সশস্ত্র বাহিনী : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগের নেতৃত্বে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। খবর আইএসপিআর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্যোগ পূর্ববর্তী ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমের সমন্বয় করেছে। নিজস্ব উৎস থেকে ১৮ হাজার ৪০০ ত্রাণের প্যাকেট  তৈরি করেছে এবং ৭১টি ছোট মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। ১৪৫টি ছোট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম বিশেষ সরঞ্জামাদিসহ সংক্ষিপ্ত নোটিসে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং উপকরণ যেমন, ৩১৩টি স্পিডবোট, পনেরোটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট, ২৩৯ আউট বোর্ড মোটর, চারটি জাপানিস উদ্ধার বোর্ড, ছয়টি ফাইবার গ্লাস বোর্ড, ১১৫টি শার্ক বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে। আর্মি এভিয়েশন উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ এর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তাসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিন স্তরের প্রয়োজনীয় নিয়েছে নৌবাহিনী। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও মোংলা নৌঅঞ্চলে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় দ্রুততম সময়ে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অনুসন্ধান কাজের জন্য নৌবাহিনীর দুটি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ার ক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টার প্রস্তুতি নিয়েছে।

‘আম্ফানের’ প্রভাবে বৃষ্টি শুরু : সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে খুলনা, বরিশাল, মোংলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে আকাশ মেঘলাসহ কোথাও কোথাও হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীর আকাশও একই কারণে মেঘলা। রাজধানীর বেশ কয়েক জায়গায় সাড়ে ৩টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা ও পটুয়াখালীতে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। আর ঢাকার আকাশ দুপুর থেকেই মেঘে ঢেকে গেছে। বিকালে শুরু হয়েছে বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়া।

চট্টগ্রামে চলছে প্রস্তুতি : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে চার হাজার ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে ২৮৪টি মেডিকেল টিম। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের, চলছে মাইকিং। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রমের। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) যে কোনো তথ্য ও সহযোগিতার প্রয়োজনে চালু করেছে কন্ট্রোল রুম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে রাখা হচ্ছে।  

খুলনায় জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে আতঙ্ক : আম্ফানের প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় এলাকায় জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  জোয়ারের পানির প্রবল চাপে যে কোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সংস্কারের অভাবে খুলনার কয়রায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার জোড়শিং বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের মাটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা জানান, কয়রার ৪৭টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভরা জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বেড়িবাঁধ ভেঙে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের একই চিত্র উপকূলের দাকোপ ও পাইকগাছাসহ অন্যান্য অঞ্চলেও। দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, ৩১ নম্বর পাউবো পোল্ডারে বটবুনিয়া, মোজামনগর এলাকায় বেড়িবাঁধ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এখানে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ও সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে খুলনার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া হয়েছে। উপকূলের দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে লাল পতাকা টানানো ও মাইকিং শুরু হয়েছে।

পটুয়াখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ : পটুয়াখালীর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে নিরাপদে রাখতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নেওয়া শুরু হয়েছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালীর উপকূলে অবস্থানরত সব মাছ ধরা ট্রলারসহ নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলায় সাইক্লোন শেল্টারসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে মোট ৭৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সজাগ থাকার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবী সদস্য প্রস্তুত রয়েছে।

পিরোজপুরে শুরু হয়েছে বৃষ্টি : পিরোজপুরে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলেও দুপুর ১২টা থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং  থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর কিছু সময় পরে ভারি বর্ষণও হয়।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় ২৩১টি সাইক্লোন শেল্টার ও স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য সাতটি উপজেলায়ই খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এর পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে আগতদের সাহরি এবং ইফতারসহ শুকনো খাবারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ে আহতদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আর মানুষকে সচেতন করার জন্য সকাল থেকেই মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। তবে লোকজন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছে না বলে জানা গেছে।

বাগেরহাটে আতঙ্কিত মানুষ :  সুপার সাইক্লোন আম্ফান ধেয়ে আসার খবরে সুপার সাইক্লোন সিডরের ছোবলে মৃত্যুপুরী শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে বিকাল থেকে আতঙ্কিত লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। সকালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভায় ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য আগাম ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি জেলার ৯৭৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়। এরপর থেকে আতঙ্কিত মানুষ গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। এদিকে ৮৫টি মেডিকেল টিমসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় রেড ক্রিসেন্টসহ ১১ হাজার ৭০৮ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে।

ঝালকাঠিতে হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ : ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে শহরে হু হু করে পানি ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলার আমুয়া বাজার, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানের বেড়িবাঁধ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। ঝালকাঠি জেলার ২৭৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরের মানুষকে আবহাওয়ার সংকেত অনুযায়ী নিরাপদে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। তবে ঝালকাঠির সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ নিয়ে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়া শুরু করেনি।

সুন্দরবনে ঝুঁকিপূর্ণ ১০ বন অফিস বন্ধ : ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন তার বুক পেতে দিয়ে এবারও লোকালয়ের মানুষদের বহুলাংশে রক্ষা করতে চলেছে। সুন্দরবন বারবার তার বুক পেতে দিয়ে উপকূলের লাখ লাখ মানুষদের বাঁচিয়ে দিলেও এখনো এই ম্যানগ্রোভ বনের অনেক ফরেস্ট অফিস ঘূর্ণিঝড় সহনীয় নয়। এবারও সুপার সাইক্লোন আম্ফান ধেয়ে আসায় আজ (মঙ্গলবার) সকালে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি স্টেশন ও টহল ফাঁড়ি বন্ধ করে সব কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের পার্শ্ববর্তী অফিসে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে বন বিভাগ। বন্ধ করে দেওয়া এসব ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির মধ্যে রয়েছে কটকা, কচিকালী, শ্যালা, দুবলা, তাম্বুলবুনিয়া, কোকিলমুনি, হিরন পয়েন্ট, পুষ্পকাটি, নুডাবেকী ও দোবাকী ফরেস্ট অফিস। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সুন্দরবনে কর্মরত বন অফিসের এসব কর্মকর্তা-বনরক্ষীদের পার্শ্ববর্তী অফিসে সরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হলেও অরক্ষিত হয়ে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকতে হবে বন্যপ্রাণীদের।

নোয়াখালীতে প্রস্তুতি : নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। মঙ্গলবার সকালে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, সংস্থার পক্ষ থেকে আপৎকালীন সময়ের জন্য নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, এক টন চিঁড়া, মুড়ি, ২০০ কেজি গুড়, পাঁচ হাজার বোতল বিশুদ্ধ পানি ও ১০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১০টি পিকআপ এবং শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকাসমূহে পর্যাপ্তসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত ৬ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র : বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ৪০০ বিশেষায়িতসহ প্রায় ৬ হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১১ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রমজানের পবিত্রতার কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত খাবার ও শিশু খাদ্যসহ প্রচুর ত্রাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে সুপেয় পানি, টয়লেট-বাথরুম, ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার। সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এর প্রভার শুরুর আগেই নিচু এলাকা, চরাঞ্চল এবং বেড়িবাঁধের বাইরে অবস্থানকারী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিশেষ করে ঢালচর এবং মনপুরার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে গত সোমবার থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া শুরু হয়েছে। কোনো মানুষকে নিচু এলাকা, চরাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের বাইরে থাকতে দেওয়া হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর