বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ভ্যাকসিন আসবে এ বছর

জোরালো আশা মার্কিন বিজ্ঞানীদের মানবদেহে সফলতা চীনে কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি

প্রতিদিন ডেস্ক

ভ্যাকসিন আসবে এ বছর

যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রারম্ভিক ফল ইতিবাচক বলে জানানো হয়েছে।

এই টিকা তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে মডার্না। প্রতিষ্ঠানটির চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. টাল জাকস সোমবার সিএনএনকে বলেছেন, আগামী পরীক্ষাগুলোতেও ঠিকঠাক ফল এলে জানুয়ারি নাগাদ তাদের টিকা সর্বসাধারণের জন্য চলে আসতে পারে। ‘এটা প্রকৃত অর্থে দারুণ খবর এবং এটা এমন খবর যে আমরা মনে করি বেশ কিছুদিন ধরে এর অপেক্ষায় ছিলেন।’

মডার্নার এই টিকা পরীক্ষামূলকভাবে গত মার্চে মানুষের শরীরে প্রথম প্রবেশ করানো হয়। প্রথম পর্যায়ের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শরীরে টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে যে ফল পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে এই ঘোষণা দিয়েছে মডার্না। পরীক্ষার এই ধাপে দেখা হয়, টিকা মানুষের জন্য নিরাপদ কি-না এবং সেটি শরীরে ওই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে কি-না। মডার্নার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে সব স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা ভাইরাসের বংশবিস্তার ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম। যা কোনো কার্যকর টিকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওই আটজনের প্রত্যেকের শরীরেই করোনাভাইরাসের ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ এমন মাত্রায় তৈরি হয়েছে, যা এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির সমান বা তার চেয়ে বেশি। নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসকে আটকে ফেলে সেটিকে মানব দেহে আক্রমণের জন্য বিকল করে দেয়। মডার্নার জাকস বলেন, ‘আমরা এই অ্যান্টিবডিগুলো দেখিয়েছি, এই প্রতিরোধ ক্ষমতা, এটা সত্যিকারে ভাইরাসটিকে আটকে দিতে পারে। ‘আমি মনে করি, আমাদের টিকা পাওয়ার যাত্রায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ।’ মডার্নার এই কাজে সম্পৃক্ত নন এমন একজন বিশেষজ্ঞও পরীক্ষার এই ফলকে ‘চমৎকার’ বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজভিত্তিক মডার্না ছাড়াও বিশ্বের আরও সাতটি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টায় মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্বে রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। সেগুলোর দুটি যুক্তরাষ্ট্রের, একটি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের, চারটি চীনের প্রতিষ্ঠান।

করোনার কার্যকর ভ্যাকসিনের ঘোষণা শিগগিরই : করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই। ইতিমধ্যে যে কয়েকটি দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, করোনা মোকাবিলায় কার্যকর ভ্যাকসিন নিয়ে ‘বড় ঘোষণা’ আসছে শিগগিরই। হোয়াইট হাউসে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গতকাল তিনি এমন কথা বলেন। খবর রয়টার্সের।

ট্রাম্প বলেন, আজ বড় সুখের একটা দিন। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বিজ্ঞানীরা। তবে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না, শিগগিরই সবকিছু খোলাসা করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের গোপন একটি দল কাজ করছে করোনা প্রতিরোধে, এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল কিছু দিন আগে। সেই গোপন দলে নোবেলজয়ী কয়েকজন বিজ্ঞানীও আছেন। কার্যকর একটি ভ্যাকসিনের জন্য তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসারি তত্ত্বাবধানে দলটি কাজ করলেও কৌশলগত কারণে তাদের যে কোনো প্রচারের উল্টো পাশে রাখা হয়েছে। ট্রাম্পের এই চমক দেওয়ার আগাম ঘোষণায় অনেকেই মনে করছেন, করোনা প্রতিরোধে গোপন সেই দলটির সাফল্যের খবর দিতে আসছেন ট্রাম্প।

ওষুধে একেবারেই সারবে করোনা দাবি চীনা গবেষকদের : ওষুধে করোনাভাইরাস একেবারেই সেরে যাবে, এমন দাবি করছেন চীনা গবেষকরা। এমনকি, করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে সক্ষম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের বিখ্যাত পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা নতুন ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করছেন। তাঁরা দাবি করছেন, করোনা সংক্রমিত রোগীদের এ ওষুধ শুধু দ্রুত নিরাময়ই করবে না, পাশাপাশি কম সময়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী করে তুলবে। খবর এএফপির।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাওয়ার আগে গত বছরের শেষের দিকে চীনে প্রথম এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্তমানে এর চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন খুঁজতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। রবিবার বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল’-এ এই গবেষণা বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

এতে বলা হয়েছে, ভাইরাসে সংক্রমিত কোষ প্রতিরোধে ব্যবহৃত নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি রোগের সম্ভাব্য নিরাময় ও পুনরুদ্ধারের সময়কে কমিয়ে আনে। পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেইজিং অ্যাডভান্সড ইনোভেশন সেন্টার ফর জিনোমিক্সের পরিচালক সানি শেই গণমাধ্যমকে বলেন, পশু পরীক্ষার পর্যায়ে ওষুধি সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সংক্রমিত ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়ায় এটি সম্ভাবনা জাগিয়েছে। গবেষক শেই ও তাঁর দল পরীক্ষার জন্য গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ৬০ জন রোগীর অ্যান্টিবডি আলাদা করেন। তাঁরা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্ট নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি থেকে ওষুধ তৈরি করেন। গবেষক শেই বলেন, তাঁর গবেষক দল অ্যান্টিবডির খোঁজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দক্ষতা ইমিউনোলজি বা ভাইরোলজির চেয়ে একক সেল জিনোমিক্সে। যখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, এককোষের জিনোমিক পদ্ধতি কার্যকরভাবে নিরপেক্ষ অ্যান্টিবডি খুঁজে পেতে পারে, তখন আমরা পুলকিত হয়েছিলাম।’

গবেষক শেই বলেন, ওষুধ এই বছরের শেষের দিকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত। এ নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রক্রিয়া চলছে। চীনে সংক্রমণ কমে আসায় অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশে এর পরীক্ষা হবে। গত সপ্তাহে চীনের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে চলে গেছে ছয়টি ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক থেকে দেড় বছর সময়সীমার মধ্যে ভ্যাকসিন পেতে চাইছে।

চীনা গবেষকেরা প্লাজমা থেরাপির সম্ভাব্য সুবিধার দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে রোগ থেকে সেরে ওঠা একজনের শরীর থেকে প্লাজমা নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। চীনে ৭০০ জনের বেশি রোগীকে এ থেরাপি দেওয়া হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্লাজমা ব্যবহারে খুব ভালো থেরাপিউটিক প্রভাব দেখা গেছে। তবে গবেষক শেই বলেন, প্লাজমার সরবরাহ খুব স্বল্প। তাদের ওষুধে যে ১৪ ধরনের নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হবে, তা দ্রুত উৎপাদন করা যাবে।

ওষুধ চিকিৎসা অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা কোনো নতুন পদ্ধতি নয় এবং এটি এইচআইভি, ইবোলা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (এমইআরএস) মতো আরও বেশ কয়েকটি ভাইরাসের চিকিৎসা করতে সফল হয়েছে। গবেষক শেই বলেন, তাঁরা চীনে ভাইরাস ছড়ানোর পরপরই কাজে নেমে পড়েছিলেন।

এর আগে রেমডেসিভির ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়। এতে একতৃতীয়াংশ রোগী কম সময়ে সুস্থ হন। নতুন ওষুধটি আরও কম সময়ে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। গবেষকেরা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাস শরীরে পুশ করার আগে যদি নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি পুশ করা হতো, তবে ইঁদুরে সংক্রমণ ঘটত না। গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের ওষুধ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ রাখবে। বিশ্বজুড়ে ১০০টির বেশি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। তবে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়টি যেহেতু বেশি চাহিদা, গবেষক শেই আশা করছেন নতুন ওষুধ আরও দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে করোনা নির্মূল করতে সক্ষম হবে। ভ্যাকসিন তখন হলেও চলবে বলে মন্তব্য করেন শেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর