বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীতেও তীব্র যানজট নগরে

আরাফাত মুন্না

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখিতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে যানবাহন চলাচলও বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজট দেখা গেছে। ২০ মিনিটের পথ যেতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট কার ও পণ্যবাহী ট্রাকের অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে সড়কে। এ ছাড়া নগরীর প্রধান সড়কগুলোতেও যত্রতত্রভাবে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোও যানজটের কারণ হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, নগরীর প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথে কড়াকড়ি করার কারণে যানবাহনগুলো বাধা পাচ্ছে। আর তাতেই দেখা দিয়েছে যানজট।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মূলত ঈদকে সামনে রেখে একেবারেই পুরনো চেহারায় ফিরেছে রাজধানী। দোকান-পাট খুলে দেওয়ার পর থেকেই মানুষ বাইরে বের হতে শুরু করেছে। অনেকেই করোনাকে গুরুত্ব না দিয়ে কেনা-কাটা করতে মার্কেটে চলে যাচ্ছেন। শুধু গণপরিবহন ছাড়া সব গাড়ি চলছে। অন্য সময়গুলোতে রাজধানীর যানজটের জন্য গণপরিবহনকে দায়ী করা হলেও, করোনাভাইরাস সেই ধারণা বদলে দিয়েছে।

গত এক মাসের মধ্যে গত দুই দিন ঢাকায় ছিল নজিরবিহীন যানজট। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার, গুলিস্তান, ফার্মগেট, বিজয়সরণি, মহাখালী, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, মিরপুর, গাবতলী এবং উত্তরা এলাকায় প্রচ- যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে যান চলাচল। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট দেখা যায়। এ সময় এ সড়কে জ্যামে আটকে থাকা প্রাইভেটকারচালক আবদুস সাত্তার বলেন, বিকালে স্যার (গাড়ির মালিক) বাড়ি যাবেন বলেছেন, এজন্য গ্যাস আনতে বের হয়েছি। প্রায় এক ঘণ্টায়ও ১০ মিনিটের পথ যেতে পারলাম না। রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এ সড়কে গাড়ি চালিয়ে ভোগান্তিতে পড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জাকির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্যারকে আনতে দুপুর দেড়টায় বসুন্ধরা থেকে উত্তরার উদ্দেশে রওনা দিয়ে সেখানে পৌঁছতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। ফেরার পথেও লেগেছে দেড় ঘণ্টার বেশি। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হওয়ার পর সোম ও মঙ্গলবারই সবচেয়ে বেশি জ্যাম পেলাম। গাবতলী এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল মোবাইল ফোনে বলেন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লেগুনা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরবাইকের দখলে রয়েছে এ এলাকার সড়ক। তিনি বলেন, অধিকাংশ গাড়ির যাত্রীরাই গ্রামে যাচ্ছে। চেক পোস্টে পুলিশ অনেককে আটকানোর চেষ্টা করায় এই এলাকায় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার যানজট সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক, উত্তর) আবদুর রাজ্জাক বলেন, হঠাৎ করেই গ্রামের দিকে যাওয়া মানুষের চাপ বেড়ে গেছে। সরকার ও আইজিপি স্যারের কড়া নির্দেশ আছে যেন অনাকাক্সিক্ষত কেউ রাজধানীর বাইরে যেতে না পারেন। সেজন্য পয়েন্ট (ইন-আউট) গুলোতে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। এতে অনেকেই রাজধানী ছাড়তে পারছেন না। সেই যানবাহনগুলো ইউটার্ন নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হচ্ছেন অনেকে। তিনি বলেন, অধিকাংশ সময়েই চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে নাগরিকরা তর্ক করতে থাকেন। এ কারণে সময়ও বেশি লাগে। এ জন্যই হয়তো কিছুটা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এর সমাধানের জন্য। বুধবার থেকে নতুন পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি যানজট দূর করতে আমরা সফল হব। রাজধানীর সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব রিকশা অবাধে চলাচল করলে দুর্ঘটনা বাড়বে। তাই অবৈধ এসব রিকশা চলাচল বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর