বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অর্থ পাচারকারী ঋণখেলাপিদের প্রণোদনা নয়

রুহুল আমিন রাসেল

অর্থ পাচারকারী ঋণখেলাপিদের প্রণোদনা নয়

ড. ফরাসউদ্দিন

দেশের অর্থ পাচারকারী ঋণখেলাপিরা যেন প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বড় বড় প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ না পান, সেদিকে নজরদারি রাখতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন গুণী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেছেন, এবার অর্থ পাচারকারী ঋণখেলাপিদের যে কোনো মূল্যে রুখতে হবে। আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচারকারী ঋণখেলাপিরা দেশ থেকে ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলেও মনে করেন দেশবরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে  আলাপকালে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে যখনই বলা হচ্ছে, তখনই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বলছে ঋণখেলাপিরা। ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশের বাইরে চলে গেছে। এ হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই ১১ বছরে মোট ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। ঋণখেলাপিরা আমদানি ও রপ্তানি প্রক্রিয়াতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অর্থ পাচার করছে। ব্যাংকখেলাপিদের কাছ থেকে এই টাকা উদ্ধার করতে হবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি যে নগদ অর্থ প্রণোদনা দিয়েছেন, তার ফলে অর্থনীতিতে জীবনীশক্তি আসবে। আর প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত যত প্রণোদনা দিয়েছেন, তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো, এই ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা প্রদান। এই মানুষগুলো এখন পণ্য কিনবেন। ফলে প্রণোদনা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, সরকার প্রতি পরিবারকে তাদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে আড়াই হাজার করে টাকা নগদ অর্থ সহায়তা সরাসরি দিচ্ছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএসে টাকা পাঠানো ইতিবাচক দিক। কিন্তু বেনামি মোবাইল ব্যাংক হিসাবে সরকারের দেওয়া নগদ প্রণোদনার টাকা বেহাত হচ্ছে কিনা, প্রকৃত ভুক্তভোগী মানুষ পাচ্ছেন কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যেন প্রণোদনার টাকা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতির গুণী এই বিশ্লেষক বলেন, সরকারের এই নগদ অর্থ প্রণোদনা দেওয়ায় মূল্যস্ফীতি একটু বাড়বে। আবার মানুষের হাতে টাকা গেলেও উৎপাদন নেই। তবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ক্ষতি হবে না। খ্যাতনামা এই শিক্ষাবিদ বলেন, বাংলাদেশ একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। এখানে যেসব মানুষজন হতদরিদ্র বা অসহায় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব হলো সরকারের। এ কথা আমাদের সংবিধানে আছে। সংবিধান রাষ্ট্রের সকল মানুষের দেখভালের দায়িত্ব সরকারকে দিয়েছে। তাই করোনাভাইরাসের এমন সময়ে অভাবী মানুষ সহায়তা পেলেন, কল্যাণ রাষ্ট্রে সরকারের দায়িত্ববোধ নিশ্চিত হলো। অর্থনীতি, মানবসম্পদ ও দারিদ্র্য নিরসনের কাজে অভিজ্ঞ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ গত ১২ বছরে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন সাধারণ মানুষ। তাদের অবদানেই বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এবার প্রবৃদ্ধির অংশ সেই মানুষের কাছে যাবে। এটাই কল্যাণ রাষ্ট্রের নিয়ম।

সর্বশেষ খবর