বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পশ্চিমবঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে তান্ডব চালিয়েছে। এতে দক্ষিণ চব্বিশপরগনা, উত্তর চব্বিশপরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও কলকাতার বিভিন্ন এলাকা লন্ডভ- হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ টাওয়ার, গাছপালা, বাঁধ এবং স্থাপনা। একইসঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে বিস্তৃত অঞ্চলের বসতি। আশঙ্কা করা হয়, এ সময় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। তবে গত রাতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আম্ফানের তা-ব অব্যাহত ছিল।

দিল্লির মৌসুম ভবন জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দক্ষিণ চব্বিশপরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্ফান। আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অর্থাৎ চোখ (আই) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অর্ধেকটা ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। এরপর সাড়ে ৬টার মধ্যে পুরো ‘চোখ’ই ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার, পরে ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। একটি সূত্রের প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, আম্ফানের তা-বে কচুবেরিয়ার জেটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। কাকদ্বীপ, কৈখালী, কুলতলী, পাথরপ্রতিমায় একের পর এক বাঁধগুলো ভেঙে যায়। ফলে বানভাসী হয়েছে বহু গ্রাম। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার কাঁচা বাড়ি। তান্ডবের শুরুতেই কলকাতায় ভেঙে পড়েছে গাছ, ট্রাফিক সিগন্যাল। পানির  তোড়ে ভেসে যায় হাওড়া ফেরিঘাট। তা-বে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দিঘা, মন্দারমণি, সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকত এবং উপকূলবর্তী এলাকায়। আম্ফানেরে দাপটে প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাওড়াতে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। তার নাম লক্ষ্মী কুমারী সাউ (১৩)। টিনের চাল উড়ে গলা কেটে তার মৃত্যু হয়। বসিরহাট মহকুমায় ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে প্রাথমিকভাবে দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বসিরহাট মহকুমার মিনা খাঁ ধুতুরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বারগা গ্রামে নূরজাহান বেগম নামে এক মহিলা ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে ওই মহাকুমার মাটিয়া থানার মমিনপুর গ্রামে ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে মহতা দাস নামে ২২ বছরের এক যুবকের। আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, আম্ফানের প্রভাবে গতকাল ভোররাত থেকেই ভদ্রক, কেন্দ্রপাড়া, কটক, পুরী, গঞ্জাম, জয়পুর, বালাসোরের মতো উড়িষ্যার উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড় শুরু হয়। রাজ্যটির পারাদ্বীপ বন্দরে সব থেকে ভয়ঙ্কর রূপ ছিল এই ঘূর্ণিঝড়ের। সেখানে ঝড়ের গতিবেগ সকালের দিকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি ছিল। ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে পড়ে বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। তা-বে দক্ষিণ চব্বিশপরগনার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা নামখানা ও বকখালিও লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দুপুরে স্থলভাগে ঢোকা শুরু করে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বেলা আড়াইটা নাগাদ আম্ফানের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘায়। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের বেশি। এরপর টানা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর চব্বিশপরগনা, দক্ষিণ চব্বিশপরগনা, হাওড়া, হুগলি  জেলার বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব চালায় আম্ফান। এ সব এলাকায় প্রবল বেগে ঝড়ো হাওয়া, সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। সময় যত কাটে বৃষ্টি ও হাওয়ার তীব্রতা ততই বাড়তে থাকে। ঝড়ের দাপটে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশপরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বহু জায়গায়  ভেঙে পড়েছে গাছ। এর ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘা রেল  স্টেশনের টিনের চাল উড়ে যায়।

সর্বশেষ খবর