শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বকে একযোগে লড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বকে একযোগে লড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী গতকাল ইউএনএসক্যাপের অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সে

কভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই মহামারীর কারণে শতাব্দীর অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার পাশাপাশি এই ভাইরাসটি আমাদের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে এটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবিলার বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার পরিবর্তনে কিছু আশার আলোও দেখিয়েছে।

গতকাল ব্যাংককে ইউনাইটেড নেশন্স ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক (ইউএনএসক্যাপ)-এর ৭৬তম অধিবেশনে ভিডিও বার্তায় দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। করোনা মহামারীর মধ্যে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংককের এই অধিবেশনে শেখ হাসিনার অংশ নেওয়া এবং মূল বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। তবে অধিবেশন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তায় তাঁর বার্তা পৌঁছে দেন। কমিশনের ৭৬তম অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হলো : ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগরে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সহযোগিতা প্রচার।’

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা, ফিজির প্রধানমন্ত্রী জসাজা ভোরেক বাইনিমারামা এবং টুভালুর প্রধানমন্ত্রী কৌসিয়া নাটানোও উদ্বোধনী অধিবেশনে ভিডিও বার্তা পাঠান। অধিবেশনে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কভিড-১৯ মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে এবং একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এসক্যাপের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি মৌলিক ইস্যু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে আমাদের অবশ্যই এসকাপের মাধ্যমে সমুদ্রের কিছু মৌলিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এগুলো হচ্ছে : প্রথমত, ব্লু ইকোনমিতে উন্নত দেশগুলো থেকে জ্ঞান, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সমর্থন বাড়ানো। দ্বিতীয়ত; অবৈধ, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকার প্রতিরোধ ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রচলিত প্ল্যাটফরম নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৎস্য উন্নয়নে যৌথ গবেষণা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় আবাস এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করা এবং ম্যাপিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিচিতি শুরু করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সম্পদের সর্বশেষ ঠিকানা হিসেবে মহাসাগর এবং সাগর আমাদের জীবন-ধারণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, পরিবেশগত দূষণকারীরা সামুদ্রিক খাদ্য-ওয়েবের প্রধান অন্তরায় এবং সমুদ্রগুলোর সম্পদ ব্যবহারের টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সম্পদ দক্ষতার পথে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একীভূত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী এ পরিপ্রেক্ষিতে আরও বলেন, তাঁর সরকার দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের অংশ হিসেবে নীল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। মিঠা পানির ও সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এসক্যাপে স্থায়ী প্রতিনিধি মো. নাজমুল কাওনাইন ইউএনএসক্যাপের ৭৬তম কমিশনের সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছেন। থাইল্যান্ড সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়।

এ প্রসঙ্গে ৭৬তম অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে কাওনাইন বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করায় এসক্যাপের ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কর্মকান্ড ও সহযোগিতা এবং ইউএনএসক্যাপের কার্যক্রমে বাংলাদেশের অত্যন্ত সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অবদানের প্রতি প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। অধিবেশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রবিষয়ক ইউনিটের সচিব মো. খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল বিভিন্ন বিষয় এবং কমিশনের কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে।

সর্বশেষ খবর