শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আম্ফানের আঘাতে উপকূল লণ্ডভণ্ড

মৃত্যু ১৪ জনের । বাড়িঘর বিধ্বস্ত । ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আম্ফানের আঘাতে উপকূল লণ্ডভণ্ড

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বাগেরহাটে বিধ্বস্ত ঘর। বগুড়ায় মিশে গেছে ধান খেত [ডানে] -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার জনজীবন। মারা গেছেন ১৪ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ত্রাণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবার অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার পর সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের উপকূলেও আঘাত হানে। সারারাত ঘূর্ণিঝড়রূপে থেকেই দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তা-ব চালিয়েছে আম্ফান। সারা রাত তান্ডবের পর গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার পর শক্তি ক্ষয় হলে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয় সরকারকে ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব দিয়েছে। তবে তারা ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোনো বিবরণ দেয়নি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার তথ্য দিয়েছে।’ পুরো হিসাব পেতে কিছুদিন লাগবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তা-বে সারা দেশে ৪৬ জেলার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগমনের বিষয়টি আগে থেকে জানার কারণে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পেরেছিলাম। তাই ক্ষতির পরিমাণটা অনেকাংশে কম হয়েছে। এর পরও দেশের ৪৬ জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসল বিভিন্ন হারে ক্ষতি হয়েছে। এসব জমিতে থাকা বিভিন্ন ফসলের ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।’ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছে, যার দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ কিলোমিটার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। ইতিপূর্বে দুর্যোগের প্রস্তুতি হিসেবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আম্ফানের প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় কমপক্ষে ৮-১০ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি বেড়েছে, যা বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধ বা তীররক্ষা বাঁধকে কোথাও কোথাও ভেঙে দিয়েছে বা কোথাও সেই বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি জনপদে প্রবেশ করেছে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, আম্ফানের প্রতিক্রিয়া শুরুর আগেই অর্থাৎ বুধবার বিকাল থেকেই বিভিন্ন জেলার বেশির ভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়ে পড়া তার মেরামতের কাজ করে যাচ্ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। তবে ঠিক কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। প্রায় সব রাস্তার ওপরই গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনগুলো এসব গাছ সরিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তা-বে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাউবো বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ফসলি জমি, অসংখ্য মাছের ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের কয়েক শ খুঁটি। আম্ফানের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছিল। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য এ ব্যাপারে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের পরই ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ উপকূলসংলগ্ন সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭ ফুট ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। সঙ্গে ছিল দমকা হাওয়া। এতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় জেলাগুলোর সব কটি উপজেলা ও অর্ধশত চর। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর ও মাছের ঘের। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানবে আর হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় কয়েক লাখ মানুষ। রাত ১২টার পরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করে। উপড়ে গেছে বহু গাছপালা। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। যশোরে নিহত ৬ : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে যশোরে গাছচাপায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে শার্শা উপজেলায় তিন, চৌগাছা উপজেলায় দুই ও বাঘারপাড়ায় তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন শার্শা উপজেলার গোগা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার শাহজাহান আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০), জামতলার আবদুল গফুরের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫) ও শার্শা সদরের মালোপাড়ার সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস (৫৫); চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩); বাঘারপাড়া উপজেলার বুদোপুর গ্রামের সাত্তার মোল্লার স্ত্রী ডলি বেগম (৪৮) প্রমুখ। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পিরোজপুরে নিহত ৩ : পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মঠবাড়িয়ায় দুই ও ইন্দুরকানিতে একজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন মঠবাড়িয়ায় দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের মৃত মজিদ মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা (৫৫), আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের দুপাদী গ্রামের মৃত মুজাহার আলীর স্ত্রী গোলেনুর বেগম (৭০); ইন্দুরকানির উমিতপুর গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে শাহ আলম (৫৫)। এর মধ্যে মঠবাড়িয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বৃষ্টিতে ভিজে নরম হওয়ায় দেয়াল ভেঙে পড়ে। সেই দেয়ালে চাপা পড়ে বুধবার রাতে শাহজাহান মোল্লা নামের শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বুধবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেলে উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য গোলেনুর বেগম রওনা দিলে পানির স্রোতে পড়ে গিয়ে সেখানেই মারা যান। অন্যদিকে শাহ আলম তার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ঘরের খাটের চারপাশ পানিতে তলিয়ে যায়। তা দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিন। পটুয়াখালীতে নিহত ২ : বুধবার সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে পরে ছয় বছরের শিশু রাসেদ নিহত হয়েছে। এর আগে সকালে কলাপাড়ায় জনসচেতনতায় প্রচারকাজ চালাতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া খালে নৌকা ডুবে নিখোঁজ সিপিপির দলনেতা শাহ আলমের লাশ ৯ ঘণ্টা পর উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল।

রাজশাহীতে আম কুড়াতে গিয়ে নারীর মৃত্যু : রাজশাহীর মোহনপুরে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে মনোয়ারা বেগম (৪২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার হরিদাগাছি গ্রামের বারুইপাড়ার ইসহাক আলীর স্ত্রী। রাতে ছোট মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন মনোয়ারা বেগম। ঝড় শুরু হলে কিছুক্ষণ পর পরিবারের সদস্যদের অগোচরে আম কুড়াতে যান। মেয়ে ঘুম থেকে জেগে মাকে না পেয়ে কান্না শুরু করলে অন্যরা বিষয়টি জানতে পারেন। অনেক সময় পার হয়ে গেলেও মনোয়ারা বেগম বাড়িতে না আসায় তাকে খুঁজতে বের হন তারা। পরে বাড়ির পাশে আমগাছের নিচে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে তার শরীর স্পর্শ করার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যান। দ্রুত বাড়ি আনার পর দেখা যায় তিনি মৃত। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কোনো গাছ বা গাছের ডালও ভেঙে পড়েনি। কীভাবে তিনি মারা গেছেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ ঝিনাইদহে ঝড়ে গাছচাপায় নারীর মৃত্যু : ঝিনাইদহে ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও একজন। সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামে রাতে স্বামী বুদোই মন্ডল ও স্ত্রী নাদেরা বেগম ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ২টার দিকে ঘরের পাশে শতবর্ষী একটি বটগাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। এতে নাদেরা বেগম মারা যান। আটকা পড়ে আহত হন স্বামী। খবর পেয়ে সকালে ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে গাছ কেটে লাশ ও আহতকে উদ্ধার করেন।

সিরাজগঞ্জে গাছচাপায় একজনের মৃত্যু : ঝড়ের মধ্যে গাছের ডাল ভেঙে দেলসাত আলী (৩৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাত ১১টার দিকে কাজিপুর সদর ইউনিয়নের প্রজারপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি দেলসাত আলী গজারিয়া পশ্চিমপাড়া থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর আঞ্চলিক সড়কের গজারিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে একটি গাছের ডাল তার ওপর ভেঙে পড়ে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বগুড়ায় নৌকাডুবিতে দুজন নিখোঁজ : বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে ১২ যাত্রী নিয়ে উল্টে যাওয়া নৌকা থেকে ১০ জনকে উদ্ধার করা হলেও দুজন নিখোঁজ হয়েছেন। গতকাল দুপুরে সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া থেকে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা উল্টে যায়। এরপর ১০ যাত্রীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও নিখোঁজ দুই যাত্রীকে খোঁজ করতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নদী এলাকায় অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। নিখোঁজ দুই নৌকাযাত্রী হলেন সারিয়াকান্দির নানদিয়ার চরের ওসমান ফকিরের মেয়ে মিম (১২) ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের খলিল মন্ডলের ছেলে ফরিদ উদ্দিন (৪৫)। লক্ষ্মীপুরে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক আটক : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে লক্ষ্মীপুর-ভৌলা নৌরুটে তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ফেরি। এতে লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট ঘাট এলাকায় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। এতে থাকা-খাওয়ার টাকা শেষ হয়ে গিয়ে চালকদের অনেকেই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানান। ট্রাকে ঈদমুখী মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন তারা। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল জানান, স্থানীয় মাতাব্বর হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আটকে পড়া চালকদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ক্ষতি জানতে দুই কমিটি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে সুপার সাইক্লোন আম্ফান প্রথমে পূর্ব সুন্দরবনের দুবলা ও কটকায় আঘাত হেনে রাতভর এই ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ বনে তা-ব চালায়। আম্ফান সুন্দরবনে আঘাত হানার আগের ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বন তলিয়ে যেতে শুরু করলে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দলে দলে কয়েক শ হরিণ কটকা, দুবলা, চরপুটিয়া ও কপিলমুনি বন অফিসের কম্পাউন্ডে দল বেঁধে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেওয়া এসব হরিণ সকালে আবার বনে ফিরে গেছে। সাইক্লোন আম্ফানে রাতভর চলে ঝড়ের তা-ব। প্রাথমিকভাবে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের আটটি বন অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে ও সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে পাঁচটি জেটি। প্রধান বন সংরক্ষকের নির্দেশে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মো. জয়নুল আবেদিন ও চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ এনামুল হককে প্রধান করে সাত সদস্যের আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন দিনের মধ্যে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের জীববৈচিত্র্যের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়ে তা জানা যাবে।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের গতকাল থেকেই ঘর নির্মাণ, অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও পরিচালকরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঈদের ছুটির সময়ও সক্রিয় থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারি ছুটির দিনেও সব সময় খোলা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অনলাইন ও অফলাইনে নিয়মিত ফাইল দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভা, একনেক, বাজেট, ৬৪ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত সভা, সর্বশেষ গতকাল জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে তথ্য নিচ্ছেন। তাঁর নির্দেশে ঈদের ছুটির মধ্যেও অফিসের সবাই সক্রিয় থাকবেন।

সর্বশেষ খবর