শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে যখন ঘূর্ণিঝড়টি দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন ২ কোটি ২০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন; যা দেশের মোট গ্রাহকের ৬০ শতাংশ। ঝড়ের তীব্রতা কমার পর গতকাল ভোর থেকে দুর্গত এলাকাগুলোয় সংযোগ পুনঃ স্থাপনের কাজ শুরু করে বিতরণ সংস্থাগুলো। তবে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি। যদিও এক ভিডিও কনফারেন্সে গতকাল বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ও বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব এলাকার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। জানা যায়, গ্রিড সাবস্টেশনগুলোয় আগুন লাগায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় দীর্ঘ সময়ের জন্য গ্রাহক বিদ্যুৎহীন ছিল। গ্রিড সাবস্টেশনের দুটি ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় গতকাল বিকালের মধ্যেও এ দুই জেলার গ্রাহককে বিদুৎ সরবরাহ করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের ৬টি বিতরণ সংস্থার অধীনে ৩ কোটি ৬৫ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক আছে। এর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের সংযোগ গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন থাকায় চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। আর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় সচল এলাকাগুলোয় বিদ্যুতের ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আরও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। সরবরাহ ব্যবস্থার এই বিপর্যয়ের মধ্যে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও গতকাল বন্ধ রাখতে হয়। সারা দেশের পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহক ২ কোটি ৮৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি গ্রাহকের সংযোগ গতকাল সকালের দিকে বন্ধ ছিল। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অঞ্জনকান্তি দাশ বলেন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১ কোটি গ্রাহকের সংযোগ ফেরানো সম্ভব হয়েছে। সংস্থাটির আওতাধীন ২৫ হাজার স্পটে তার ছিঁড়ে গেছে। ৩০০-এর মতো বিদ্যুতের খুঁটি ও প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের মিটার ভেঙে গেছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর, পটুয়াখালী জেলায় বিদ্যুৎ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ ফিরতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে এরই মধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, পিরোজপুর জেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরেছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে। তবে আম্ফানে চাঁদপুর, কক্সবাজার, বরিশাল এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় ঝড়ে বড় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের জনসংযোগ শাখার পরিচালক এ বি এম বদরুদ্দোজা সুমন জানান, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্র্রামসহ অন্য জেলায় তেমন সমস্যা হয়নি। সেখানে বিতরণ সংস্থাগুলো লোড কমিয়ে দেওয়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এসব এলাকায় চাওয়া মাত্রই বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব। রাজশাহীর আট জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী এস এম রেজাউল করিম জানান, চাহিদা কমে যাওয়ায় জেলার ৪৪টি ৩৩ কেভি ফিডারের সবই বন্ধ রাখতে হয়েছিল। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩০টি চালু করা হয়। বাকিগুলো চালু করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে হাই ভোল্টেজের কারণে সচল ফিডারগুলোয় বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন জানান, তাদের মোট ১২ লাখ গ্রাহকের সবাই ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৬ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া গেছে। কিছু লাইন সচল হলেও ১১ কেভি ফিডার সচল করতে না পারায় বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বরগুনায় গতকাল দুপুর পর্যন্তও বিদ্যুৎ দেওয়া যায়নি। এসব এলাকায় মেরামত কাজ চলছে। বিদ্যুতের একক ক্রেতা ও বিক্রেতা পিডিবি চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও কুমিল্লার শহরাঞ্চলে ৩০ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেয়। সংস্থাটির জনসংযোগ শাখার পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঝড়ে পিডিবির বিতরণ লাইনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও ময়মনসিংহে কিছু লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল বিকালের মধ্যে পিডিবির আওতাধীন সব গ্রাহক বিদ্যুৎ পেয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর