শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
দুই মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং

প্রাথমিক তথ্যে ক্ষতি হাজার কোটি টাকার বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ২৬ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল বিকালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন।

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বিকালে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৪৬ জেলার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। ঝড়ের আঘাতে যে রকম ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল সে তুলনায় খুব কম ক্ষতিই হয়েছে। তিনি জানান, আগে থেকে প্রস্তুতি থাকায় ক্ষতি এড়ানো গেছে। তার পরও সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম, লিচু, সয়াবিন, কলা, সবজি, তিল, পান ও মুগ ডালের। বোরো ফসল আগেই ঘরে তুলে ফেলায় খুব একটা ক্ষতি হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়। সেখানে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির আম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও পুটিয়া উপজেলা এবং দিনাজপুরেও আমের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আম নষ্ট হয়ে গেছে। গড়ে আমের ক্ষতি হয়েছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ শতাংশ, ভুট্টা ৫ শতাংশ, বোরো ফসল ১০ শতাংশ, লিচু ৫ শতাংশ, কলা ১০ শতাংশ, পেঁপে ৫০ ভাগ, মরিচ ৩০ ভাগ, সয়াবিন ৫০ ভাগ ও মুগ ডাল ৫০ ভাগ। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরায় যে আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ত্রাণের সঙ্গে বিতরণের জন্য ইতিমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকেও একইভাবে অনুরোধ করা হয়েছে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নির্দেশনা দিতে। আমরাও ইউএনও এবং কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি আম কীভাবে কৃষকের কাছ থেকে কেনা যায় তার উদ্যোগ নিতে। তিনি বলেন, প্রাণ গ্রুপসহ যারা আম কেনে তাদেরও আমরা অনুরোধ করেছি আচার তৈরির জন্য আম কিনে নিতে। এতে কৃষক ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিকে কোনোভাবেই ঝুঁকির মধ্যে রাখা হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে সার, বীজ ও অন্যান্য যা কিছু লাগে তা দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতি নির্ধারণ করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকের তালিকা করে সে অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে। তিনি জানান, সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে সবজি ও ফুল চাষিদের। প্রায় ৪১ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। একইভাবে মাছ ও প্রাণী সম্পদেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মাছ ও পোলট্রির। আমরা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে এসব ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করব। পৃৃথক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, আম্ফানের আঘাতে ২৬ জেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে পটুয়াখালীতে একজন স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের কারণে আরও ১০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত স্বেচ্ছাসেবীর পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির একটা বিবরণ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আম্ফানের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু ব্রিজ-কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক নলকূপও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরায় আমের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮৪টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে ও ফাটল ধরেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দুই থেকে আড়াই শ কোটি টাকা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানান, আম্ফানের কারণে চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত চারটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাত দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। তখন বলা যাবে আসলে কত টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ জেলায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব বাড়িঘর মেরামতের জন্য তৎক্ষণাৎ প্রতিটি জেলায় ৫০০ বান্ডেল ঢেউটিন ও নগদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর