শনিবার, ২৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পাকিস্তানে ৯৯ আরোহী নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

পাকিস্তানে ৯৯ আরোহী নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত

পাকিস্তানের করাচিতে অবতরণের আগে জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে বিধ্বস্ত হয় একটি যাত্রীবাহী বিমান -এএফপি

পাকিস্তানের করাচিতে অবতরণের আগে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী একটি বিমান ৯৯ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় শতাধিক নিহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ৫৫ জনের লাশ উদ্ধারের কথা জানানো হয়। অবশ্য এ সময় কেবলমাত্র উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছিল। গতকাল বিকালে জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। বিমানটি লাহোর থেকে করাচি যাচ্ছিল। সূত্র : ডন।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, দুর্ঘটনার আগে বিমানটি করাচির জিন্নাহ গার্ডেন সংলগ্ন মালির এলাকার মডেল কলোনির ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। এটি ছিল পাকিস্তান এয়ারলাইনসের এয়ারবাস এ৩২০। এতে ৯৯ জন যাত্রী এবং ৮ জন ক্রু ছিলেন। খবরে বলা হয়, করাচি বিমানবন্দরের কাছাকাছি জনবহুল এলাকায় বিমানটি ধ্বংস হয়। মুহূর্তে কালো ধোঁয়ায় এলাকা ঢেকে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।

এএফপি জানিয়েছে, বিমানটি স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়। করাচি বিমানবন্দরে অবতরণের আগ মুহূর্তে বিমানটি ‘মডেল কলোনি’ আবাসিক এলাকার কাছে এসে দ্রুত নিচে নেমে যায় এবং তার আগে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পাইলট যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানিয়েছিলেন। তখন কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে পাইলটকে জানানো হয়, বিমানবন্দরের দুটি রানওয়েই উন্মুক্ত রয়েছে, তিনি যে কোনো একটিতে অবতরণ করতে পারেন। কিন্তু পাইলট তা না করে মধ্য আকাশে বিমানের গতি পরিবর্তন করেন।

এদিকে পিআইএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডার মার্শাল আরশাদ মালিক সাংবাদিকদের জানান, বিমানটি অবতরণের মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে বিধ্বস্ত হয়। তিনি বলেন, ‘করাচির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানের পাইলট এসময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে বলেছিলেন, বিমানের ইঞ্জিনে প্রযুক্তিগত সমস্যা হয়েছে। এ কারণে ল্যান্ড না করে কিছু সময় আকাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরপরই এটি বিধ্বস্ত হয়।’ তবে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানটি অবতরণের ঠিক আগ দিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চাকা খুলতে পারছিল না।’ সিন্ধুর গভর্নর ইমরান ইসমাইল জানান, বিমানটি জনবহুল এলাকায় ভেঙে পড়ে।

তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের পুরো চিত্র পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বসতি এলাকায় বিমানটি ভেঙে পড়ায় অনেক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। ওইসব ভবনে থাকা মানুষের মধ্যে অনেকেই হতাহত হয়ে থাকতে পারেন। বিমান ভেঙে পড়ার পর ভবনগুলোতে আগুন ধরে যায়। এ সময় বিধ্বস্ত ভবনের দেয়াল ও ইট-পাথর আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তারা আরও জানান, অন্তত ৫-৬টি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং পাকিস্তান রেঞ্জার্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা হেলিকপ্টারসহ অন্যান্য বহর নিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। গত রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছিল। উল্লেখ্য, দেশে লকডাউন চললেও সবেমাত্র দেশটিতে যাত্রীবাহী বিমান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ অবস্থায়ই এ দুর্ঘটনা ঘটল।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে এর আগে বিমান দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালে ইসলামাবাদে। ওই দুর্ঘটনায় বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ারব্লুর একটি যাত্রবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ১৫২ আরোহীর সবাই নিহত হন। এটাই এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। এ ছাড়া ২০১২ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১২৭ আরোহীর সবাই নিহত হন। আর ২০১৬ সালে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল থেকে ইসলামাবাদ যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী বিমানে আগুন লাগলে ৪৭ জন নিহত হন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর