শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু

দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা মাদারীপুর, নড়াইল, কুড়িগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর ও চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা  গেছেন। তাদের মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এসব এলাকায়। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে।

মাদারীপুরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা নিয়ে নাজমুল হোসেন (৪৫) নামের এক যুবক মারা গেছেন।

গতকাল সকালে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার হাউসদির হাবিবুর রহমান চৌকিদারের ছেলে। সম্প্রতি তিনি ঢাকা থেকে এলাকায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা গেছে, বুধবার করোনার উপসর্গ জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন নাজমুল। তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। সম্প্রতি তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বাড়ি যান।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন ৪৫ বছর বয়সী মাকড়াইল গ্রামের এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতেই মারা যান তিনি।  লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি ঢাকার আজিমপুর এলাকায় থাকতেন। তিনি একটি সিকিউরিটি কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঈদের দিন বিকালে বাড়িতে আসেন তিনি।

জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃহস্পতিবার রাতেই ওই ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার আবদুল জলিল (২৩) নামের এক যুবক মারা গেছেন। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জ্বর ও গলাব্যথা নিয়ে ওই যুবক ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তিনি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের মইজ উদ্দিনের ছেলে।

ঢাকা থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়া গিয়ে মারা গেলেন ৬৫ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত নার্স। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর গোরস্তানপাড়ার মেয়ের বাড়িতে মারা যান তিনি।  ওই নারী চলতি মাসে ঢাকা থেকে তার জামাই  সোয়েব আলীর বাড়িতে বেড়াতে যান। প্রতিবেশীদের দাবি মৃত্যুর আগে থেকেই করোনা উপসর্গ নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং ডায়রিয়াজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। জানা গেছে, ১৮ দিন আগে ওই নারী ঢাকা থেকে তার জামাই বাড়িতে বেড়াতে যান। এরপরই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন এবং নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরে ভুগছিলেন। শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। তাকে স্থানীয় চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়েছেন। মৃত্যুর পরে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক। বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু হয়। তার বড় ভাই মনজুরুল হক জানান, সদর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামে বাস করতেন তার ছোট ভাই। ঈদের আগে তিনি ইতিকাফের উদ্দেশ্যে বাড়ির পাশে মসজিদে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি সর্দি, কাশি ও জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই শিক্ষক।

মেহেরপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে লিটু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গতকাল মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের কোলা গ্রামের বাসিন্দা। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, লিটু মিয়া বুধবার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পর কাউকে কিছু না বলে বাড়ি চলে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার বিকালে পুনরায় ভর্তি হলে তাকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ১০টায় তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তার করোনা উপসর্গ থাকায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পরে হোমকোয়ারেন্টাইনে ছিলেন।

চাঁদপুর শহরের দর্জিঘাট এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ৪৫ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। তিনি এক সপ্তাহ  ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিজনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন। গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন গিয়ে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেন।

করোনা উপসর্গ নিয়ে ৯জনের মৃত্যু : গাজীপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এক শিক্ষানবিস আইনজীবী মারা গেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক জানান, ওই ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে শ্বাসকষ্টের তীব্রতা বেড়ে গেলে তাকে শহরের উত্তর ছায়াবীথি লালমাটি এলাকার বাসা থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। নিহতের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের দেওতলা গ্রামে।

নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেরদৌসি বেগম (২৭) নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার খাল্লা গ্রামের মালদ্বীপ প্রবাসী আল আমিনের স্ত্রী। নিরসিংদী পৌরসভার সালিধাতে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

সর্বশেষ খবর