শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে প্লাজমা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসার সুবিধার্থে প্লাজমা ব্যাংক করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। করোনা শনাক্তকরণ কিট উদ্ভাবনের পর ‘প্লাজমা ব্যাংক’ স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিট নিয়ে দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। এরপর থেকে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন ডা. জাফরুল্লাহ। এর মধ্যে করোনার চিকিৎসায় নিয়েছেন প্লাজমা থেরাপিও। প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা দেখেই ‘প্লাজমা ব্যাংক’ করবে কথা মাথায় আসে তার।

এদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের নিয়েও তৈরি হচ্ছে প্লাজমা ব্যাংক। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি প্লাজমা ব্যাংকে চট্টগ্রাম মহানগরের বাসিন্দা যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান প্লাজমা ব্যাংক তৈরির উদ্যোগ নেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। নিজে এটা নিয়ে তা বুঝতে পারছি। বৃহস্পতিবার শারীরিকভাবে বেশ দুর্বলতা অনুভব করছিলাম। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এসে এক ব্যাগ রক্ত নিতে হয়েছে। নিয়মিত কিডনি চিকিৎসার অংশ হিসেবে ডায়ালাইসিস করতে হয়েছে। কিন্তু প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার পর চাঙ্গা হয়ে উঠেছি। প্লাজমা থেরাপি সব করোনা রোগীর পাওয়া দরকার। শুধু আমরা কয়েকজন সুবিধা পাব, আর দেশের অন্যরা বঞ্চিত থাকবে, তা হতে পারে না। সব মানুষকে এই সুবিধা দেওয়া আকাশকুসুম কল্পনা নয়। এটা বাস্তব। আমার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর প্রফেসর ডা. মহিউদ্দিন খান ফোন করে প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর আমি প্লাজমা থেরাপি নেই। প্রথমবার প্লাজমা থেরাপি নিয়েই বুঝতে পারি, করোনা রোগের জন্য এটা অত্যন্ত কার্যকর। এখন প্লাজমা ডোনেট করার জন্য দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে। যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, বোঝানো হয়, তাহলে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন ও শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে, তারা খুব সহজেই দান করবে। কিছু সরঞ্জামও লাগবে। আমরা এখন উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রফেসর ডা. মহিউদ্দিন খান ঢাকা মেডিকেলে কাজ করছেন। শিশু হাসপাতালে কাজ করছেন ডা. হারুন। তারা অত্যন্ত মহৎ কাজ করছেন। তাদের সেই কাজের অংশ হিসেবেই আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে একটি প্লাজমা ব্যাংক গড়তে যাচ্ছি। জানা গেছে, সিএমপিতে প্লাজমা ব্যাংক তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া সিএমপির ৩৯ জন সদস্যকে এই প্লাজমা ব্যাংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে যারা সুস্থ হবেন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সিএমপির তৈরি এই প্লাজমা ব্যাংক থেকে সিএমপির সদস্য ও চট্টগ্রামে যারা আক্রান্ত হবেন তাদের জন্য প্লাজমা দেওয়া হবে। সিএমপির এই প্লাজমা ব্যাংক কার্যক্রম তদারকির জন্য সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগমকে প্রধান করে একটি মনিটরিং কমিটিও করা হয়েছে। কমিটিতে উপ-কমিশনার (সদর) আমির জাফর ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ও বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসকদের রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে বসবাস করা ব্যক্তি যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে সিএমপির প্রত্যেকটি থানায় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এই প্লাজমা ব্যাংক থেকে সিএমপির সদস্য ও চট্টগ্রামে যারা আক্রান্ত হবেন তাদের জন্য প্লাজমা দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৪২৯ জন। মারা গেছেন ৬৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৯৭ জন। এর মধ্যে ৩৯ জন সিএমপির সদস্য। যারা সুস্থ হয়ে ফের কাজে যোগ দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর