শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

চীনকে ছাড়াল ভারত, ব্রাজিলে কবর সংকট

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নতুন করে বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো দেশে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছিল। এ প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তামূলক বিধিনিষেধ শিথিল এবং লকডাউন তুলে নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তার পরেই বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়া শুরু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, বৃহস্পতিবার এক দিনেই ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০৪ জন  প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। নতুন করে ৫ হাজার ৪২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার।

নতুন করে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় মারা যায় ১ হাজার ২২৩ জন। এর পরেই ছিল ব্রাজিল। সেখানে এদিন নতুন করে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৬৭ জনের। অপরদিকে মেক্সিকোতে মারা যায় ৪৬৩ জন এবং যুক্তরাজ্যে ৩৭৭ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬১ এবং মারা গেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩৩০ জন। এর পরেই রয়েছে ব্রাজিল। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮১২ জন। মারা গেছেন ২৬ হাজার ৭৬৪ জন। রাশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ জনের। স্পেনে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৬ এবং মারা গেছে ২৭ হাজার ১১৯ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ১২৭ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৩৭ জনের।

মৃত্যুতে চীনকে ছাড়াল ভারত : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় দেশটি এখন উঠে এসেছে বিশ্ব তালিকায় নয় নম্বরে। ভারতের রাজ্য সরকারগুলো এবং আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত ভারতে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আক্রান্তের সংখ্যার হিসাবে চীনের (৮৪ হাজার ১০৬)  চেয়ে তা প্রায় দ্বিগুণ। করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন ভারতে ৪ হাজার ৭০৬, আর চীনে ৪ হাজার ৬৩৮। প্রসঙ্গত, আক্রান্তের সংখ্যায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানি, তারপর ভারত। তুরস্ক আছে দশম স্থানে। আর চতুর্দশ স্থানে থাকা চীনের আগে আছে ইরান, পেরু ও কানাডা।

ভারতে সর্বশেষ হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৭ হাজার ৪৬৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সম্প্রতি বিশেষ ট্রেন ও ফ্লাইটে ভারতজুড়ে নাগরিকদের চলাচল এবং লকডাউনের কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক রাজ্য আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে অন্য রাজ্য থেকে মানুষ আসার কথাও বলা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারতে লকডাউন চলছে গত ২৫ মার্চ থেকে। কয়েকবার সময়সীমা বাড়ানোর পর লকডাউনের চতুর্থ ধাপ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ মে। এরপর কীভাবে চলবে সে বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে এনডিটিভি।

আমেরিকায় মৃত্যু টপকালো কোরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধকেও : কোনোভাবেই মৃত্যুমিছিলে লাগাম টানতে পারছে না আমেরিকা। মাত্র চার মাসে মার্কিন মুলুকে করোনার সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে  গেছে। প্রতিদিনই এই তালিকা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, কোরিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যতসংখ্যক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল, করোনার প্রকোপে তার থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোরিয়া যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৬ হাজারের বেশি মার্কিন। ভিয়েতনাম যুদ্ধেও প্রাণহানি ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছিল। প্রাণহানির নিরিখে এই দুই যুদ্ধকেই এবার ছাপিয়ে গেল কভিডের আক্রমণ। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১ লাখ ১৬ হাজারের মতো মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছিল। আমেরিকায় যেভাবে প্রতিদিন মৃত্যুমিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এবার এই পরিসংখ্যানকেও পেছনে ফেলতে পারে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ।

জাপানেও বাড়ছে সংক্রমণ : গত সোমবার জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার কদিনের মধ্যে আবার জাপানে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার এক দিনে আরও ৬৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৭ জন। ১৪ মে’র পর এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। নতুন আক্রান্তের ২১ জন জাপানের দক্ষিণের শহর কিতাকিউশুর। ২৩ দিন ধরে সেখানে আক্রান্তের হার শূন্য ছিল। তারপর আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত ৬ দিনে নতুন ৪৩ জন আক্রান্ত হওয়ায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা জেগেছে। বৃহস্পতিবার দেশে মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৩১ জন এবং মৃত্যু ৮৮৭ জনের।

এদিকে ১ জুন মধ্যরাত থেকে জাপানের রাজধানী টোকিও দ্বিতীয় ধাপে খুলবে। এই ধাপে স্কুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জিম, থিয়েটার, শপিং মল ও অন্য অপ্রয়োজনীয় খুচরা দোকানপাট খুলবে বলে জানান শহরের গভর্নর ইউরিকো কোইকে। রেস্তোরাঁ এখনো রাত ১০টায় বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

ব্রাজিলে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল : ব্রাজিলে করোনায় গত বৃহস্পতিবার এক দিনে রেকর্ড ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এক হাজারে ওপরে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ব্রাজিলের আদিবাসী অঞ্চলগুলোতেও। মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় জায়গা সংকুলান হচ্ছে না দেশটির গণকবরগুলোতে। একজন স্থানীয় বলেন, ‘পুরো বিশ্বের মতো ব্রাজিলেও আজ মহামারীর মুখোমুখি। আমাদের এই অঞ্চলেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন বহু মানুষ। আমাদের এই আদিবাসী সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।’ আরেকজন বলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের সবাইকে আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। নিজে বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ ভাইরাসটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না, যেটা দুঃখজনক।’ এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় লকডাউন তুলে দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় আবারও রাজধানী সিউলের বাইরে হঠাৎ করেই কভিড নাইন্টিনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই শতাধিক স্কুল। তবে রাজধানী সিউলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

২৪ ইউরোপীয় দেশে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসে ২৪টি ইউরোপীয় দেশে প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা কেটি স্মলউড এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মৃত্যুর ওই সংখ্যাটি যদিও সব ধরনের মৃত্যুর তালিকা সংবলিত একটি সংখ্যা, কিন্তু ওই সময়টিতে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন ও ব্রিটেনের হাসপাতালে কভিড-১৯-এ অনেক মানুষ মারা যায়।’ স্মলউড বলেন, ‘একটি ভালো ইঙ্গিত- এই সময়কালে উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চতর মৃতের সংখ্যা কভিড-১৯ এর সঙ্গে যুক্ত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক হান্স ক্লুগে বলেন, ‘এখন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। দুই সপ্তাহ ধরে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া, তুরস্ক, বেলারুশ এবং ব্রিটেনে নতুন সংক্রমণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর কভিড-১৯-এ ইউরোপে ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন।’

সর্বশেষ খবর