সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদ

ক্ষোভের আগুন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

২০ ডলারের জাল নোট ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে গত ২৫ মে অপরাহ্ণে প্রকাশ্য রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক বর্বরোচিতভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং এই হত্যাযজ্ঞে ডেরেক চোভিনের সঙ্গে অংশ নেওয়া অপর তিন পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতারের দাবিতে মিনিয়াপলিস সিটির ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারা আমেরিকায়।

শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে বিক্ষোভ-কর্মসূচির সময় টহল পুলিশ এবং হোয়াইট হাউসের সামনে সিক্রেট পুলিশের দেড় শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ছাড়াও মিনিয়াপলিস সিটির একটি পুলিশ স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্র ও শনিবার দিনভর চলা বিক্ষোভের সময় অন্তত ৩৩ সিটিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় কমপক্ষে ২২ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে লসএঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া প্রভৃতি স্থানে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোররাত নাগাদ কারফিউ জারি করা হয়েছে মিনিয়াপলিস, ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া, মিলোয়াকি, সিনসিনাটি, ডেনভার, আটলান্টা, শিকাগো, পোর্টল্যান্ড, সিয়াটল, লসএঞ্জেলেস সিটিতে। এ ছাড়া পরিস্থিতি সামলাতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি, মিনেসোটা, জর্জিয়া, কলরাডো, কেন্টাকি, ডেনভারসহ বিভিন্ন স্থানে। উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরে রাখা হয় ৮.৪৬ মিনিট। প্রথম ২.৫৩ মিনিটেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন ফ্লয়েড। নিস্তেজ হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তিনি আকুতি জানান, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ কিন্তু ন্যূনতম সাড়া দেননি পুলিশ অফিসাররা।  এদিকে নির্যাতনকারী সেই পুলিশ অফিসার ডেরেক চোভিনকে তুমুল বিক্ষোভের মুখে শুক্তবার সকালে গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে তৃতীয় ডিগ্রির হত্যামামলা (সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ বছর জেল) দায়ের করা হয়েছে। শনিবার তাকে পাঁচ লাখ ডলার বন্ডে মিনেসোটার আদালত জামিন দিয়েছে। এতে সন্তুষ্ট নন বিক্ষোভকারীরা। তারা ডেরেকের সঙ্গে থাকা আরও তিন পুলিশ অফিসারকেও মামলায় অভিযুক্ত এবং গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রতিটি সিটিতে হাজার হাজার মানুষ পুলিশের বর্বরতার নিন্দা, প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। বাধা দিলেই হামলে পড়ছেন পুলিশের ওপর। একই সঙ্গে টহল পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সিংহভাগই অবশ্য মাস্ক পরিহিত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকালে মিশিগানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তবে পুলিশের গুলিতে সে মারা যায়নি। অপরদিকে গত পাঁচ দিনের টানা বিক্ষোভের সময় আহত হয়েছেন ৬৫ পুলিশ অফিসার। পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে জনমত সোচ্চারের অভিপ্রায়ে ‘জাতীয় প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয় শনিবার, যা সারা আমেরিকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এদিকে লকডাউনের কারণে ২১ মার্চ থেকে জনমানবশূন্য নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কোয়ার, ইউনিয়ন স্কোয়ার এবং বার্কলে সেন্টার পুনরায় হাজার হাজার মানুষের মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে। শুক্রবার দিনভর ব্রুকলিনে বার্কলে সেন্টারের আশপাশে পুলিশের সঙ্গে থেমে চলা সংঘর্ষের জের হিসেবে শনিবার হাজারো পুলিশ দখলে রাখে টাইমস স্কোয়ারকে। এর ফলে সেখানে বিক্ষোভ করতে সক্ষম হননি কেউই। ক্ষুব্ধ লোকজন স্লোগান দিতে দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে গিয়ে পুনরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন। এরপর সেখান থেকে স্লোগানে উত্তাল অবস্থায় ইউনিয়ন স্কোয়ার এবং সিটি হলের সামনে জড়ো হন হাজারো আমেরিকান। ‘কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান’, ‘নো জাস্টিস-নো পিচ’, ‘উই অল আর জর্জ ফ্লয়েড’, ‘হোজ স্ট্রিট-আওয়ার স্ট্রিট’, ‘নো র‌্যাসিস্ট পুলিশ’ ইত্যাদি লেখা পোস্টার, ব্যানার, প্লেকার্ড বহন করেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য স্টেট ও সিটি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেননি স্টেট গভর্নররা। তার পরিবর্তে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ট্রাম্পের আইনমন্ত্রী বিল বার শনিবার এক বিবৃতিতে উ™ভূত পরিস্থিতির জন্য বিশেষ একটি মহলকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘প্রতিবাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হাইজ্যাক করা হয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর