বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রেকর্ড সংক্রমণে আক্রান্ত ছাড়াল ৫০ হাজার

বিশেষ প্রতিনিধি

রেকর্ড সংক্রমণে আক্রান্ত ছাড়াল ৫০ হাজার

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৯১১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫২ হাজার ৪৪৫ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭০৯ জনে। টানা দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটির পর তৃতীয় কর্মদিবসে গতকাল করোনাভাইরাস নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৯৫০টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১২ হাজার ৭০৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, মৃতদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং চারজন নারী। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে দুজন, বরিশালে তিনজন, রাজশাহীতে দুজন, ময়মনসিংহ বিভাগে একজন এবং সিলেট বিভাগে চারজন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৮ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫২৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ১২০ জন।?

এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং তার সবশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা

নওগাঁ : জেলা শহরের কাপড়পট্টি এলাকার নিজ বাড়িতে সোমবার রাত ১২টার দিকে ৫৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঈদের দুই দিন আগে ওই ব্যবসায়ীর জ্বরসহ করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর তিনি দোকান বন্ধ করে কোয়ারেন্টাইনে চলে যান। ঈদের আগেই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৩০ মে তার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তিনি বাসায়ই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে নওগাঁয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়াল। গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত নওগাঁয় মোট ১৩২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮৮ জন।

রাজশাহী : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায়। গত শনিবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। রবিবার তার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরদিন তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ নিয়ে রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা তিনজনে দাঁড়াল। এ ছাড়া মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহীতে মোট ৫৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন।

সিরাজগঞ্জ : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেলার বেলকুচি উপজেলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ৭০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি উপজেলার তামাই গ্রামে। এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে মঙ্গলবার ভোরে মারা যান তিনি। ঈদের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন থেকে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হলো।

চট্টগ্রাম : এক দিনে ২০৮ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ায় চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দঁভড়িয়েছে ৩ হাজার ১৯৩ জনে। সোমবার ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করা নমুনা পরীক্ষায় এ ফল আসে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, এদিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৩১টি। এর মধ্যে পজিটিভ মিলেছে ২০৮ জনের। চট্টগ্রামে আক্রান্তদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুর রহমান রয়েছেন। বিআইটিআইডি ল্যাবে এদিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২১২টি। এতে করোনাভাইরাস পজিটিভ মিলেছে ৪৭ জনের মধ্যে। এর মধ্যে মহানগরী এলাকার ৩৮ এবং বিভিন্ন উপজেলার ৯ জন। চমেক ল্যাবে করা ২৬১ নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া গেছে ১০১ জনের। এর মধ্যে উপজেলার রয়েছে পাঁচজন এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর ৯৬ জন। সিভাসু ল্যাবে এদিন নমুনা পরীক্ষা হয় ১৫৩ জনের। এতে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে ৫৮ জনের। এর মধ্যে মহানগরী এলাকার আটজন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৪৭ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পাঁচটি এবং পজিটিভ পাওয়া গেছে বিভিন্ন উপজেলার দুজনের। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব অনুসারে সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ১৯৩ জনে।

গাজীপুর : জেলায় নতুন করে আরও ৯৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪০ জনে দাঁড়াল। গাজীপুর থেকে পাঠানো ৪৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় সর্বশেষ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী নতুন করে আরও ৯৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদরে (মহানগর) ৬৪ জন, শ্রীপুরে ১৩ জন, কালিয়াকৈরে ৭ জন, কাপাসিয়ায় ৫ জন ও কালীগঞ্জে ৪ জন রয়েছেন।

ফেনী : ফেনীতে পৌর কাউন্সিলর ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন করে আরও ১৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার রাতে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে ১৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭৫ জনে দাঁড়াল। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দাগনভূইয়া উপজেলায় ১৫ জন ও সদর উপজেলায় একজন রয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও দুজন নারী।

চাঁদপুর : জেলায় নতুন করে আরও নয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় পাঁচজন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় দুজন ও হাজীগঞ্জে দুজন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১৯ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন।

ময়মনসিংহ : জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ সদরে দুই চিকিৎসকসহ ৪৯ জন, ঈশ্বরগঞ্জে পাঁচজন, ত্রিশালে পাঁচজন, নান্দাইলে চারজনের করোনা শনাক্ত হয়। এনিয়ে জেলায় ৫৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৮৮ জন।

দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বিরলে তিনজন এবং ফুলবাড়ীতে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩১ জন।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে নতুন করে আরও চারজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত এ চারজনের বাড়ি শরণখোলা, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলায়। এ নিয়ে জেলার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জনে। এর মধ্যে দুজন মারা গেলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলায় গত সোমবার দুপুর সোয়া ২টা নাগাদ আসা ১০২ জনের ফলাফলে ৩৭ জনের পজিটিভ এসেছে, যা জেলায় একদিনে আসা ফলাফলে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ আসা ফলাফলে সদর উপজেলায় ১৩ জন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় পাঁচজন, নবীনগর উপজেলায় চারজন, কসবা উপজেলায় আটজন, নাসিরনগর উপজেলায় ছয়জন ও বিজয়নগর উপজেলায় একজন। জেলায় আক্রান্ত ১৬৯ জনের মধ্যে ৬১ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। করোনা শুরুর দিকে জেলায় দুজন মারা যান।

রংপুর : রংপুর বিভাগের ছয় জেলায় আরও ৪৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১৩, নীলফামারীতে ১৭, ঠাকুরগাঁয়ে ১১, দিনাজপুরে চার, গাইবান্ধায় দুই এবং কুড়িগ্রামে একজন। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৮৩ জনে।

সর্বশেষ খবর