বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়িয়েছে এক লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা বিশ্বে করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধস নেমেছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে (জুলাই-মার্চ) বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ দুই হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি আয় কমার কারণে বিশেষ করে পোশাক খাতে রপ্তানি নিম্নমুখী হওয়ায় এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার প্রধান সূচক রেমিট্যান্স আয় মে মাসে কিছুটা বাড়লেও আগের দুই মাসে অনেক কম এসেছে। এসব কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বড় বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে চার হাজার ৩৩ কোটি ডলার। ফলে মার্চ শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ দুই হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এই সময়ে দেশে আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মার্চ শেষে চলতি হিসাবে ২৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ৪২১  কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক লেনদেনে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ৩২ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। এই অর্থ বছরে সেবা খাতে বিদেশিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৮৩২  কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৫০৪  কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ৯ মাসে সেবায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ সময় দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৪৫ কোটি ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই কমেছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ ও নিট কমেছে ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। দেশের শেয়ারবাজারেও বিদেশি বিনিয়োগ গত বছরের  চেয়ে প্রায় ১০ গুণ কমেছে। গত ৯ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র এক কোটি ৪০ লাখ ডলার যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত না থাকা অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। গত কয়েক বছর আমাদের তুলনামূক উদ্বৃত্ত ছিল। এ বছর আকস্মিক পরিস্থিতির কারণ বড় ঘাটতির মুখে পড়তে হয়েছে। আমাদের গত অর্থবছরে ঘাটতি ছিল। এবার আবার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে মে মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। রপ্তানি কমলেও আমদানিও কমেছে। সেক্ষেত্রে আগামী ভালো হওয়ার আশা করা যায়।

সর্বশেষ খবর