শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আসছে ৫,৫৬,৯৭৮ কোটি টাকার বাজেট

মোট আয় ৩,৭৮,০০০ কোটি । ঘাটতি ১,৭৮,৯৭৮ কোটি । এডিপি ২,০৫,১৪৫ কোটি প্রবৃদ্ধি ৮.২, মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের লক্ষ্য । থাকবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের রূপরেখা । সংকট কাটিয়ে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখছেন অর্থমন্ত্রী

মানিক মুনতাসির

আসছে ৫,৫৬,৯৭৮ কোটি টাকার বাজেট

চলমান কোরোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের রূপরেখা দিয়ে ৫,৫৬,৯৭৮ কোটি টাকার নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বাজেট চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩৩,৭৭৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটের পরিমাণ ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫,০১,৫৭৭ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে খসড়া রূপরেখা ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজেটের এসব অঙ্ক প্রায় চূড়ান্ত। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। তবে এসব অঙ্ক পরিবর্তনও হতে পারে। কেননা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেওয়ার আগে বাজেটের কোনো অঙ্কই চূড়ান্ত নয়। নিয়ম অনুযায়ী এবারের বাজেটের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পরিমাণ ২,০৫১৪৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, এবারের অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা জুড়ে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কভিড-১৯ এর প্রভাবের বিবরণ। থাকছে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রূপরেখা। সরকার ইতিমধ্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোও উল্লেখ থাকবে। ইতিমধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সহায়তার বিবরণ এবং মানুষকে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার একেবারে শেষাংশে তিনি কভিড-১৯ পরবর্তী এক নতুন ভোরের স্বপ্নের কথা বলবেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, এসএমইসহ সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষায় বাজেটে থাকবে দিকনির্দেশনা। এবারের বাজেটকে সরকার কভিড-১৯ পরবর্তী বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এতে কভিড-১৯ এর পরবর্তী কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এজন্য স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষার আওতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করে করহার না বাড়িয়ে করজাল বিস্তৃতির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা থাকবে বাজেটে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে এ বছর করপোরেট কর না বাড়িয়ে তা কমানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। বিশ্বব্যাংক আইএমএফ, এডিপিসহ প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে এ বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক পর্যায়ে চলে যাবে। এশিয়ায় অনেক দেশই ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধিতে চলে যাবে। তবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে জানানো হয়েছে। যেটা সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আসছে বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা রেখে বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী ভোগ কমে যাওয়ায় এবং জ¦ালানি তেলের দাম ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় সামনের বছরে মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়েই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এজন্য আসছে বাজেটেও ৫ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতির টার্গেট ঠিক করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে রেকর্ড পরিমাণ। কেননা কভিড-১৯ এর প্রভাবে রাজস্ব আদায় কমে যাবে। এজন্য পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ঘাটতির অর্থ সংস্থানের জন্য সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে। তবে কভিড-১৯ এর কারণে আসছে বছওে বৈদেশিক সহায়তার হার বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের  মোট আকার হতে পারে ৫,৫৬,৯৭৮ কোটি টাকার, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে এডিপির আকার ইতিমধ্যে অনুুুুমোদন করা হয়েছে ২০,৫১৪৫ কোটি টাকার। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে এ বাজেট তিনি উপস্থাপন করবেন। বাজেট পাস হবে জুনের শেষে এবং বাস্তবায়ন হবে ১ জুলাই থেকে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এজন্য আসছে বাজেটে জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষার উদ্যোগ প্রতিফলিত হতে হবে। উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বরং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সারাবিশ্বই এখন বিপর্যস্ত। ফলে বাজেটটা এমন হতে হবে যেখানে মানুষ সত্যিকার অর্থেই উপকৃত হবে।

মোট ব্যয় : আগামী অর্থবছরের বাজেটের মোট আকার ধরা হচ্ছে ৫,৫৬,৯৭৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩৩,৭৮৮৮ কোটি টাকাই হবে সরকারের পরিচালন ব্যয়। আর উন্নয়ন বাজেট ধরা হচ্ছে ২,০৫,১৪৫ কোটি টাকার। মোট আয় ধরা হচ্ছে ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হচ্ছে  ১,৭৮,৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের বাজেটের আকার ধরা হয় ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ধরা হয় ৫,০১,৫৭৭ কোটি টাকা।

বাজেটের আয় : আগামী অর্থবছরের মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩,৭৮,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ৩,৩০,০০০ কোটি টাকা আয় আসবে। এনবিআর বহির্ভূত আয় ধরা হচ্ছে ৩৩,০০০ কোটি টাকা এবং ননট্যাক্সের রাজস্ব ১৫,০০০ কোটি টাকা।

বাজেটের ঘাটতি এবং অর্থায়ন : আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ১,৭৮,৯৭৮ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.৬৪ শতাংশ। এবারই প্রথম বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। বাজেটের ঘাটতির অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থকে ১,১৩,০০০ কোটি অর্থায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং বিদেশি উৎস থেকে ৭৭,৭৭,০০০ কোটি টাকা আসবে বলে মনে সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎস বলতে ব্যাংক থেকে ৮৮,০০০  কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০ কোটি ডলার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংক এক বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা সরবরাহ করবে। এডিবি ইতিমধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটের কিছু অংশে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর