বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আলাদা করোনা ইউনিট করার নির্দেশ কেউই মানছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। হু হু করে বাড়ছে রোগী। শহরের রোগীরা কিছুটা স্বাস্থ্য পরামর্শ বা চিকিৎসা সেবা পেলেও বঞ্চিত গ্রামের মানুষগুলো। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫০ শয্যার উপরে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি পৃথক ইউনিট করে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানার বালাই নেই কোথাও।

কাছাকাছি করোনার জন্য নির্দেশিত হাসপাতাল না থাকায় অধিকাংশ আক্রান্ত রোগী বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সময়মতো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরামর্শ না পেয়ে অনেকে বাড়িতেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও মিলছে না চিকিৎসা বা ভেন্টিলেশন সুবিধা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশ বাস্তবায়নের বাস্তবতা খুঁজতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি জেলায় খোঁজ গিয়ে দেখা গেছে, কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকেই প্রস্তুত করা হয়নি পৃথক করোনা ইউনিট। বসানো হয়নি পৃথক আইসোলেশন শয্যা বা ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। প্রস্তুত করা হয়নি প্রশিক্ষিত জনবল। এদিকে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা বা আইসোলেশন সুবিধা না থাকায় অধিকাংশ করোনা পজেটিভ রোগী বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এতে ঘরের মধ্যেই আক্রান্তের শংকা বাড়ছে। ইতিমধ্যে একই পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন অসংখ্য নজির সামনে এসেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সকল হাসপাতাল-ক্লিনিককে নির্দেশ দিয়ে রাখা হয়েছে। তারা প্রস্তুত আছে। এখন পর্যন্ত যেসব হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোতেই শয্যা খালি আছে। খোঁজ নিয়ে বরিশালে শুধু শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া কোথাও পৃথক করোনা ইউনিট করার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বাসুদেব কুমার দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দেশের আগে থেকেই বরিশালের সকল উপজেলা হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা চলছে। তবে রোগীরা হাসপাতালে এসে থাকতে চায় না। তারা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে চান। এদিকে সিলেটে ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে শুধু শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। সিভিল সার্জন জানান, এই হাসপাতালেই এখনো এক-তৃয়াংশ শয্যা খালি আছে। এর বাইরে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩০০ শয্যার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালকে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে সিলেটে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে করোনা ইউনিট চালু বা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি। সিলেট বেসরকারি হাসপাতালও ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাছিম আহমেদ বলেন, এখানে চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ও ৫০ শয্যার উপরে পাঁচটি হাসপাতাল আছে। মেডিকেল কলেজগুলোয় কভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে একক প্রবেশ পথ হওয়ায় সাধারণ রোগীর নিরাপত্তার কারণে অন্য হাসপাতালগুলোয় এটা সম্ভব না। দিনে দিনে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।  দেশে প্রথম ১০ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৫৭ দিনে। ৮৭ দিনের মাথায় এসে সেই রোগী বেড়ে ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ, শেষ ৩০ দিনে রোগী বেড়েছে ৪৫ হাজার। এই মুহূর্তে করোনার জন্য  ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী কয়েকগুণ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী এখন দৈনিক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে আড়াইহাজারের উপরে।

সর্বশেষ খবর