বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
চার দিনে নিহত ১০

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ সহিংসতা চলছেই

লাভলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ সহিংসতা চলছেই

শ্বেতাঙ্গ মার্কিন পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড খুনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছেই। অষ্টম দিনের মতো গত ২ জুন মঙ্গলবারও বিক্ষোভ-মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। তবে আগের তিন দিনের মতো কোনো হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কিংবা লুটতরাজের ঘটনা এদিন ছিল না। এর মধ্যে শুধু চার দিনের বিক্ষোভ চলাকালেই বিভিন্ন স্থানে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এদিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিউইয়র্ক ডিসি, ফিলাডেলফিয়া, লসঅ্যাঞ্জেলেসসহ ২৪ সিটিতে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিনভর ৬০ থেকে ৭০ সিটিতে বিক্ষোভ হয়। যদিও সন্ধ্যায় কারফিউ জারির পরও অনেকেই মিছিল করেছেন এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন পুলিশের সামনেই। কারফিউ ভঙ্গের জন্য কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা না করে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ বাসায় যাওয়ার আহ্বান জানান নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তারা। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, কৃষ্ণাঙ্গ জর্জকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা ও বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণে লিপ্তদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনে গত তিন দিন ধরে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে। তারা মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে সুযোগ বুঝে পার্শ্ববর্তী দামি পণ্যের স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করেছে। রবি ও সোমবার রাতে বেশকটি সিটিতে কারফিউর মধ্যেও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ফিলাডেলফিয়া, লসঅ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, মায়ামি, পোর্টল্যান্ড, সিয়াটল, লাসভেগাস, সেন্টলুইস প্রভৃতি স্থানে। নিউইয়র্ক সিটিতে সোমবার রাতে কারফিউ সত্ত্বেও বহু দোকানে হামলা, ভাঙচুরের পর মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটতরাজের অভিযোগে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, লসঅ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা, মিনিয়াপলিস প্রভৃতি স্থানের পুলিশ কর্তৃক মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিনে ৬ হাজার ৫০০ ‘দুর্বৃত্তকে’ গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্ত শনাক্তের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও পুলিশ উল্লেখ করেছে। ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক, আটলান্টা, লসঅ্যাঞ্জেলেস সিটিতে লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, মিনিসোটা স্টেট গভর্নর টিম ওয়ালজ জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে মিনিসোটা স্টেটে পুলিশি আচরণের ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিনেসোটা মানবাধিকার ডিপার্টমেন্ট এবং স্টেট গভর্নর যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা প্রদানকালে বলে, বর্ণবিদ্বেষমূলকভাবে পুলিশ অফিসাররা লাগাতারভাবে কৃষ্ণাঙ্গ অথবা স্প্যানিশ কিংবা এশিয়ানদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে এ আচরণ চিরতরে বন্ধের লক্ষ্যে আইনের সংস্কার করা হবে।

জর্জের শেষ কৃত্যানুষ্ঠান ও দাফন : পুলিশের পাশবিকতার শিকার জর্জ ফ্লয়েডের লাশ সৎকারের আগে তিন সিটিতে তার কফিনে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানানো হবে। মিনিয়াপলিসে পুলিশের বর্বরতায় মৃত্যুবরণকারী জর্জের বাড়ি হচ্ছে টেক্সাস স্টেটের হিউস্টনে। সেখানে তাকে দাফনের আগে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনের অনুষ্ঠান হবে মিনেসোটা ও নর্থ ক্যারলিনায়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি-সমাবেশ হবে মিনিয়াপলিসে নর্থ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন সেন্টার’র নেতা আর্ল শার্পটন এ কর্মসূচির সমন্বয় করবেন। এর দুই দিন পর শনিবার নর্থ ক্যারলিনার রেফোর্ডে অর্থাৎ জর্জের জন্মস্থানে দ্বিতীয় শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশ হবে কফিন সামনে নিয়ে। এটি অনুষ্ঠিত হবে সেখানকার ক্যাপ ফিয়ার কনফারেন্স বি সদর দফতরে বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। তার শেষ কৃত্যানুষ্ঠান হবে ৯ জুন বেলা ১১টায়। এর আগের দিন সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হিউস্টনের ফাউন্টেন অব প্রেইজে তার কফিন খোলা রাখা হবে সর্বসাধরণের দেখার জন্য। এ ব্যবস্থা করবে টেক্সাসের দ্য ফোর্ট বেন্ড মেমোরিয়াল প্ল্যানিং সেন্টার।

সর্বশেষ খবর