শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম

কোটি মানুষের জন্য শয্যা ৩২০

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ থাকা রোগীরা। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা চলছে ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনায়। সরকারি হাসপাতালে খালি নেই শয্যা। বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ। খালি নেই আইসিইউ। সংকট অক্সিজেনের। বন্ধ চিকিৎসকদের চেম্বার। চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে নমুনা পরীক্ষায়। বিলম্ব হচ্ছে নমুনার ফল পেতে। শনাক্তের আগেই মৃত্যু বাড়ছে উপসর্গ নিয়ে। কভিড-১৯ ও নন-কভিড রোগীদের চলছে চিকিৎসার জন্য হাহাকার। উপেক্ষিত সরকারি সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্যসেবায় চলছে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলায় ১ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত সরকারি তিন হাসপাতালে মাত্র ৩২০ শয্যা। জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউসহ ১৬০ শয্যা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসিইউসহ ১১০ শয্যা ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ৫০ শয্যা। অথচ চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ৫৬ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার এক দিনেই আক্রান্ত হয় ১৪০ জন। চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত ৩ হাজার ৫৩৭ জন। এখানে ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৮ জন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব বলেন, হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ নেই। চাইলেও রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। দেওয়া যাচ্ছে না আইসিইউ সাপোর্ট। চট্টগ্রামে এখন অন্তত ৬০টি আইসিইউ শয্যা জরুরি ভিত্তিতে চালু করা দরকার।

জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত বিভাগীয় কমিটির সভায় করোনা চিকিৎসায় নগরের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরসহ ব্যবহারের নির্ধারণ করে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পর দুই মাস পার হলেও একটি বেসরকারি হাসপাতালও চালু হয়নি। উল্টো বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ থাকার অভিযোগ আছে। এমন অবস্থায় গত ২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামের বেসরকারি ইউএসটিসি ও ইম্পেরিয়ালকে কভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা চালুর নির্দেশ দেয়। তাছাড়া গত ২৪ মে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কভিড-নন কভিড রোগীদের সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু চট্টগ্রামে সরকারের এ তিন সিদ্ধান্তের কোনোটিই মানা হয়নি।

অভিযোগ আছে, বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে দিয়ে রক্ষা করা হয়েছে ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু হলি ক্রিসেন্টও চলছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নানা সংকট নিয়ে। পক্ষান্তরে, ইউএসটিসি ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ। আর করোনা প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকেই বন্ধ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি।

করোনা মোকাবিলায় স্বাচিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। আমার জানা মতে, বেসরকারি হাসপাতালকে দেওয়া তিনটি সিদ্ধান্তের একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারি হাসপাতালগুলোর পক্ষে সব রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত, উপসর্গ বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ দায় এড়াতে পারে না। তাদের অবহেলার কারণে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হচ্ছে। কার স্বার্থে ১২টি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এসব পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে?’ জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চলছে নৈরাজ্য। সরকারের কোনো সিদ্ধান্তই বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাস্তবায়ন করছে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকার প্রদত্ত সিদ্ধান্ত পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে আইন জারি করা দরকার। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, দিন দিন নমুনা পরীক্ষা বাড়ছে, আক্রান্তও বাড়ছে। তবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নতুন করে রেলওয়ে হাসপাতাল ও হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হয়েছে। সিটি করপোরেশনও আইসোলেশন সেন্টার করছে। এসব পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করা যাবে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ভারপ্রাপ্ত ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ বলেন, চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা সংকট আছে, তা সত্য। তবে আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি সংকটের মধ্যেও রোগীর সর্বোচ্চ সেবা দিতে। তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা শুরু হলে আর সংকট থাকবে না। এ ব্যাপারে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।

 

সর্বশেষ খবর