শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
রাজশাহী

ক্লিনিক হাসপাতাল সুনসান নীরবতা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আগে থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আছে রোগীদের। ভরসা ছিল ক্লিনিক। কিন্তু এখন ক্লিনিকপাড়াও সুনসান। নামি ক্লিনিকগুলোতে যান না চিকিৎসকরা। আর হাসপাতালে গেলেও দেখা মেলে না চিকিৎসকদের। করোনার অজুহাতে ভেঙে পড়েছে রাজশাহীর চিকিৎসা ব্যবস্থা। করোনা আক্রান্ত রোগীর কাছে যান না চিকিৎসক। সাধারণ রোগীরাও পাচ্ছেন না সেবা। মানুষের চলাচল আগের চেয়ে স্বাভাবিক হলেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। সাধারণ রোগীরা যেখানে অসহায়, সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা আরও করুণ। পুরো বিভাগে আইসিইউ বেড আছে মাত্র ৩১টি। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ ও বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ১০টি।

গত এক সপ্তাহে এই বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৩২ জন। কিন্তু ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা বাড়েনি। উল্টো পথে হাঁটছেন হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। রাজশাহীর যে ২১টি আইসিইউ বেড আছে, সেটিও করোনা আক্রান্ত রোগীরা পান না বলে অভিযোগ আছে স্বজনদের। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া এলাকার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার আট বছরের মেয়ে গত কয়েকদিন থেকে অসুস্থ। আমি রাজশাহী শহরে মাঝে মাঝে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু এখন তো শহরের সব বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক বসছে না। তাই পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখাচ্ছি। নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার শাশুড়িকে দীর্ঘদিন থেকে পপুলারে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে দেখাই। কিন্তু করোনার এই সময় পপুলারসহ সব বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসক বসছে না। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আমার এক ভাগ্নের সহযোগিতায় এখন মাঝে মাঝে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দেখাতে হচ্ছে। সেখানেও ঠিকমতো ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না। পুঠিয়ার বেলপুকুর থেকে রামেক হাসপাতালে অসুস্থ মাকে নিয়ে এসেছিলেন শাহীন হোসেন। শাহীন জানান, এর আগেও লক্ষ্মীপুরে এক মেডিসিন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েছি মায়ের। এখন সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। তাই রামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। বহির্বিভাগে মেডিসিন চিকিৎসককে দেখাব। দেশে করোনা বিস্তারের পরই সুনসান ক্লিনিকপাড়া। কোনো ক্লিনিকেই চিকিৎসক নেই। ভরসা যখন হাসপাতাল, তখন সেখানেও চিকিৎসা মিলছে না। চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও স্বজনরা জানান, জরুরি বিভাগে দেখানোর পর ভর্তি হলে পাঠানো হয় ওয়ার্ডে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ওয়ার্ড একেবারেই ইন্টার্ননির্ভর হয়ে পড়েছে।  তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আগের মতোই সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, আগের মতোই তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন। করোনার কারণে চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না-কথাটি সত্য নয় বলে দাবি তার। তিনি আরও বলেন, করোনা রোগী হিসেবে যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তাদের কারও আইসিইউ লাগলে আমরা অবশ্যই দিচ্ছি। রোগীর স্বজনরা আইসিইউ না পাওয়ার যে অভিযোগ করছেন, তা সঠিক নয়।

সর্বশেষ খবর