শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
রংপুর

দেখা মেলে না ডাক্তারের

নজরুল মৃধা, রংপুর

রংপুরে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। রমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ গত ৩ মাসেও কাজে যোগ দেয়নি। অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর মাত্র শতকরা ৫ শতাংশ ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে চিকিৎসার  সুযোগ পাচ্ছেন। বাকি ৯৫ শতাংশ রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগী মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা থাকলেও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তারই বসছেন না। দু-একজন ডাক্তার বসলেও তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে দেখা গেছে রংপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে বেহাল দশায়। সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক এমনকি হোমিও চিকিৎসকরাও রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে শত শত রোগী বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। রংপুর নগরীর শাহীপাড়ার এস্কেন্দার ভুইয়া ডায়াবেটিক, অর্থপেডিকসহ বেশকিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। নগরীর কয়েকটি ক্লিনিকে ঘুরে চিকিৎসক না পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সোমবার ভর্তি হন তিনি। পরদিনই তার স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয় বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। অথচ তার অবস্থা গুরুতর। যা বাড়িতে চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কামাল কাছনা এলাকার গৃহিণী মাহফুজা শারমিনের ৮ মাসের শিশুকন্যার মুখে ঘা হয়েছে। তিনি কয়েকজন শিশু বিশেষজ্ঞের চেম্বার ঘুরে ডাক্তার না পেয়ে এক হোমিও ডাক্তারের কাছে যান। ওই হোমিও চিকিৎসক চেম্বারের দরজা না খুলে মোবাইল ফোনে রোগের বর্ণনা শুনে দরজার ফাঁক দিয়ে এক শিশি ওষুধ দেন। এ হচ্ছে রংপুরের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র। এদিকে জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায়  বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৪৩ জন। এর মধ্যে মাত্র ২২ জন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। বাকি ৪২১ জন বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা নেওয়া এসব রোগীর অধিকাংশই জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। রোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিভাগ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যা ঠিকমতো করছে না। অন্যদিকে রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে রোগীর সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশে যখন থেকে করোনা বিস্তার শুরু হয় তখন থেকেই এই হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একাংশ কাজ থেকে বিরত থাকে। ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো কাজে যোগ দেয়নি। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। রংপুর জেলা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত এবং এর বাইরে সব মিলিয়ে আড়াইশর মতো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নিত। দুইশর ওপরে অপারেশন হতো। বর্তমানে কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা থাকলেও ডাক্তার বসছে না। যদিও দু-একজন বসছেন তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরন্ব কুমার রায় জানান, অনেক ডাক্তারই রোগী দেখতে শুরু করেছেন। তবে করোনা ঝুঁকির কারণে অনেকে রোগী দেখছেন না বলে তিনি জানান। রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, যেসব ইন্টার্ন চিকিৎসক এখনো কাজে যোগ দেননি তাদের শেষবারের মতো চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা আগামী শনিবার নাগাদ কাজে যোগ দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামছুর রহমান কোয়েল বলেন, অনেক ডাক্তার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে অনেকে রোগী দেখছেন না। তবে মেডিসিন, ডায়াবেটিকসহ কয়েকটি বিভাগের ডাক্তারা রোগী দেখতে শুরু করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর