শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

এক দিনে প্রাণ গেল ৩৫ জনের, শনাক্ত ২৪২৩

বিশেষ প্রতিনিধি

দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দেশে টানা চার দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী দৈনিক শনাক্ত হচ্ছে দুই হাজারের বেশি। জুন মাস শুরু হওয়ার পর এক দিনেও শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজারের নিচে নামেনি। ত্রিশের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে টানা তিন দিন ধরে। গেল এক দিনে দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭৮১ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪২৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা গতকাল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ২৯ জন ও নারী ছয়জন। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে দুজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন রয়েছেন। নাসিমা সুলতানা জানান, মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৯ জন, সিলেট বিভাগের দুজন এবং রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের একজন করে রয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২২ জন, বাসায় মারা গেছেন ১২ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় একজনকে। মোট শনাক্তের বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৮টি, নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৪টি। যার মধ্যে ২৪ ঘণ্টার পরীক্ষায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭১ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ১৬১ জন। শনাক্তের বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। নাসিমা সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন ঘরে থাকার পরও পরিবারের বয়স্কদের মধ্যে কেউ কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলামেশা করার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং তার সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা

চট্টগ্রাম : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুই নারী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পাঁচলাইশ ও জামালখান এলাকার ওই দুই নারী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভোর ৫টায় মারা যান পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী এক নারী। তার মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৫৬ বছর বয়সী আরেক নারী মারা যান। এদিকে জেলায় এক দিনে আরও ১৪০ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বুধবার বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে মোট ৫৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, নতুন করে আরও ১৪০ জনের দেহে করোনাভাইরাস পজিটিভ মিলেছে। এর মধ্যে মহানগরীতে ৮৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৫৪ জন। বিআইটিআইডি ল্যাবে পরীক্ষা হয়েছে ১৫৮ নমুনা। পজিটিভ পাওয়া গেছে ২৯ জনের মধ্যে। এর মধ্যে মহানগরী এলাকার পাঁচজন এবং বিভিন্ন উপজেলার ২৪ জন। চমেক ল্যাবে ২২৬ নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে ৭৫ জনের। এর মধ্যে মহানগরীর ৭৪ এবং এর বাইরের একজন। এদিন সিভাসু ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয় ১৪৬টি। শনাক্ত ৩৬ জনের মধ্যে সাতজন মহানগরী এলাকার এবং ২৯ জন বিভিন্ন উপজেলার। বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৩৯ জনে।

নরসিংদী : জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো দুজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ছাড়া নতুন করে আরও ২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯ জন। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৪১ জন। গতকাল নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন, মাধবদী শেখেরচরের ফুলতলা এলাকার রিতা পাল (৫৯) ও মাধবদীর আনন্দী এলাকার আবদুল কাদের (৬৫)।

ফেনী : ফেনীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কের আফরোজা ভবনে সুনীল সাহা নামে একজনের মৃত্যু হয়। তিনি শহরের এফ রহমান এসি মার্কেটের শাড়িজ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে শুক্রবার করোনার টেস্ট করার পর তার করোনা পজিটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি রবিবার ফেনীতে এসে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ধীরেন্দ্র কুমার নাথ নামে আরও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌর এলাকার থানা পাড়ার বাসিন্দা। গত ২৯ নভেম্বর তার করোনা টেস্ট করার পর ৩ মে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় বুধবার রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এদিকে ফেনীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চারজনই ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জগৎপুরের বাসিন্দা। এদের মধ্যে মা, মেয়ে ও নাতনি রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ। এ নিয়ে জেলায় এই পর্যন্ত ১৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৬২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের।

সাভার : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাভারে আলোচিত ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক রানার বাবা আবদুল খালেক মারা গেছেন। গতকাল ভোরে তিনি মারা যান। স্বজনরা জানান, গত রবিবার আবদুল খালেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসার জন্য তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি না করে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। গত সোমবার এনাম মেডিকেলে তার বাবার নমুনা দেওয়া হয়। কিন্তু ফলাফল পাওয়ার আগেই আজ ভোরে তিনি মারা যান। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, আবদুল খালেকের করোনা পজিটিভ ছিল বলে এনাম মেডিকেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

বগুড়া : বগুড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক তালুকদার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকালে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বগুড়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ সিরাজুল হক তালুকদারের বড় ছেলে। তিনি সাংবাদিকতা ও অধ্যাপনা পেশায় জড়িত ছিলেন। মরহুমের পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ঢাকায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে করোনায় পজিটিভ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মারা যান।

মানিকগঞ্জ : জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম ইউনুছ দেওয়ান (৬১)। তার বাড়ি সিঙ্গাইর পৌর এলাকার আজিমপুর গ্রামে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন তিনজন। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মোট দুই হাজার ৮৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০৭টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। যাতে পজিটিভ পাওয়া গেছে ১৯৭ জনের দেহে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭ জন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ১১৮ জন নিজ বাড়িতে আসোলেশনে আছেন। মারা গেছেন তিনজন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন।

কেরানীগঞ্জ : ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে আরও ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৫১৩ জন হলো। তাদের মধ্যে ১৫ জন মারা গেছেন, সুস্থ হয়েছেন ৯৩ জন।

সর্বশেষ খবর