শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে সেই চার পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা

কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

তীব্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মিনেসোটার সেই পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিনের (৪৪) বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ থার্ড ডিগ্রি থেকে সেকেন্ড ডিগ্রিতে উন্নীত করা হলো। একই সঙ্গে হাতকড়া পরিহিত জর্জ ফ্লয়েডের (৪৬) গলায় হাঁটু চেপে নির্মমভাবে হত্যার সময় দাঁড়িয়ে থাকা অপর তিন পুলিশ অফিসারকেও সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফ্লয়েডকে হত্যার ৯ দিন পর মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কিথ এলিসন ৩ জুন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

মিনিয়াপলিস সিটিতে গত ২৫ মে অপরাহ্ণের এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে সারা আমেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো তীব্র আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের ব্যাপকতা এতটাই প্রকট হয়েছে যে, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ কয়েক ডজন সিটিতে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। নবম দিবসের মতো গত বুধবারও প্রধান প্রধান সিটিতে কারফিউ বলবৎ ছিল। ৬০টিরও অধিক সিটিতে এদিনও বিক্ষোভ হয়েছে। অনেক স্থানে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ করা হয় টহল পুলিশের সামনেই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুন ফ্লয়েডের শেষ কৃত্যানুষ্ঠান পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। প্রসঙ্গত, ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন আন্দোলনের মাত্রা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল যে, বিক্ষোভে ঢুকে পড়া দুষ্ট লোকেরা আশপাশের মূল্যবান সামগ্রীর স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজে লিপ্ত হয়েছিল। এ কারণে এই ৩ রাতে বিভিন্ন সিটি থেকে ৭ হাজারের অধিক মানুষকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের শুরু থেকে ৯ দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা মোট ১০ হাজার ৫০০। মারা গেছেন ১০ জন। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে হত্যা মামলার অভিযোগ সেকেন্ড ডিগ্রিতে উন্নীত করা প্রসঙ্গে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা মানবাধিকার অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, থার্ড ডিগ্রিতে অভিযোগের অর্থ হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা নয়। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে খুন করা। অর্থাৎ বড় ধরনের একটি সমাবেশে গ-গোল হচ্ছে, তা দমনে কর্তব্যরত পুলিশের গুলি অথবা বেয়নেট চার্জে কারও মৃত্যু হলে, অথবা সহায়-সম্পত্তি নিয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে ঝগড়া-বিবাদের সময় মারপিটে কারও মৃত্যু হলে সে হত্যায় অভিযুক্তরা থার্ড ডিগ্রির আসামি হয়। ফ্লয়েড হত্যা মামলায় প্রথমে ডেরেক চৌভিনকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে থার্ড ডিগ্রির অভিযোগ পেশ করা হয়েছিল। এ ছাড়া অপর তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও মামলায় জড়িত করা হয়নি। এসব ঘটনায় রাজপথে সোচ্চার প্রতিবাদ ওঠায় মিনেসোটা স্টেট গভর্নরের নির্দেশে চারজনের বিরুদ্ধে নতুন এই অভিযোগপত্র পেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনা না ঘটলেও ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের পর ডেরেকসহ অন্যরা তাকে মেরে ফেলায় উদ্যত হন-এটাই হচ্ছে সেকেন্ড ডিগ্রির অভিযোগ। আদালতে তা প্রমাণিত হলে ডেরেকের ৪০ বছরের কারাদন্ড এবং সহযোগী তিনজনের ১০ বছর করে কারাদন্ড হতে পারে। উল্লেখ্য, ওই তিনজনের মধ্যে মাত্র আলেক্সান্দার কিং (২৬) বুধবার আত্মসমর্পণ করেছেন। অন্য দুজন অফিসার থমাস লেন (৩৭) এবং টৌ থাও (৩৪) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেননি। এই মামলার পরবর্তী তারিখ ৮ জুন।

সর্বশেষ খবর