শনিবার, ৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ আমেরিকায়, যোগ দিলেন চিকিৎসকরা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ আমেরিকায়, যোগ দিলেন চিকিৎসকরা

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে গত বৃহস্পতিবার শোকার্ত মানুষরা নিহত জর্জ ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড নীরবতা পালন করেছেন। এদিকে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিচার ও পদ্ধতিগত সংস্কারের দাবিতে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ ভেঙ্গে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

সেনেটের ডেমোক্রেট ককাস-এর সদস্যরা বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল-এর ইম্যান্সিপেশন হলে সমবেত হয়ে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড নীরবতায় অংশ নেন। ফ্লয়েড পরিবারের সদস্য ও ডাক্তার নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বকারী বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এ সময় দেওয়া বক্তব্যে ফ্লয়েডের সম্মানে ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট স্কট হ্যাগেন ‘জর্জ ফ্লয়েড মেমরিয়্যাল স্কলারশিপ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ইয়ং ব্ল্যাক আমেরিকান লিডারদের উচ্চ শিক্ষায় সহযোগিতা করবে এই স্কলারশিপ এবং প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে এমন স্কলারশিপ চালুর আহ্বান জানান হ্যাগেন। তাহলে সবার মধ্যেই বর্ণ-বিদ্বেষমূলক মনোভাব আর জাগ্রত থাকবে না। এ সময় উপস্থিত সবাই বিপুল করতালিতে এই উদ্যোগে সমর্থন দেন এবং বিত্তশালীরা স্কলারশিপ ফান্ডে অর্থ প্রদানের অঙ্গীকারও করেন। এদিকে নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড অ্যাল শাপর্টন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেন, ‘যারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক অসংগতভাবে নিহত হয়েছেন এবং গোঁড়ামি ও বর্ণবিদ্বেষের কারণে অসঙ্গতভাবে নিহত হয়েছেন- তাদের দীর্ঘ তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে।’ উল্লেখ্য, ফ্লয়েডের কফিন সামনে নিয়ে আরও দুটি স্মরণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশ হবে। একটি হবে শনিবার নর্থ ক্যারলিনার রেফোর্ডে অর্থাৎ জর্জের জন্মস্থানে। সেখানকার ক্যাপ ফিয়ার কনফারেন্স বি সদর দফতরে বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান হবে। এরপর টেক্সাসের হিউস্টন সিটিতে হবে ৯ জুন সর্বশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি ও স্মরণ-সমাবেশ। এই হিউস্টনেই জর্জ শৈশর-কৈশোর এবং যৌবনের উচ্ছ্বল দিনগুলো অতিবাহিত করেন। সেখানেই তার অভিভাবকরা বাস করছেন। আর এখানেই দাফন করা হবে জর্জ ফ্লয়েডের। অভিযুক্তদের আত্মসমর্পণ : এদিকে জর্জ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত চৌভিন ছাড়া আলেক্সান্দার কিং (২৬), থমাস লেন (৩৭) এবং টৌ থাও (৩৪) বৃহস্পতিবার মিনিয়াপলিস কোর্টে পোল আর স্কগিনের এজলাসে আত্মসমর্পণ করলে প্রত্যেককেই এক মিলিয়ন ডলার বন্ডে জামিনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে চৌভিনেরও জামিন হয় মিলিয়ন ডলার বন্ডে। তবে তাকেও কারাগার থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া হয়নি।

 বিক্ষোভ চলছেই : সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সবাই স্মরণ-শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাবেশে অংশ নিলেও চলমান বিক্ষোভ-সমাবেশে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ৪ জুন কংগ্রেসের এক শুনানিতে। বর্ণ-বৈষম্য অবসানে ফৌজদারি বিধিতে সংস্কার দাবিতে স্লোগান উঠেছে দশম দিবসের বিক্ষোভ-সমাবেশে। আইনের সংস্কার ছাড়া পুলিশী আচরণে পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবারও বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, লসএঞ্জেলেস, শিকাগো, আটলান্টা, ডেনভারসহ ৪২ সিটিতে। তবে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কারফিউ শুরুর পরও কয়েকটি স্থানে শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে। মিছিলের সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত স্লোগান ছিল ‘ডিফান্ড দ্য পুলিশ’ (পুলিশের বরাদ্দ কমাও), ‘নো জাস্টিস-নো পিস’ ইত্যাদি।

এদিকে গত কয়েকদিনে বিক্ষোভের সময় নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্থানে লুটতরাজ ও ভাঙচুরের শিকার হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যে ‘জরুরি অনুদান প্রোগ্রাম’ ঘোষণা করেছেন এই সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো। গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের অঙ্গীকরে কর্মরত একটি সংস্থা ‘সমোস’ মেয়রকে এই কর্মসূচি শুরুর জন্যে ৫ লাখ ডলার প্রদান করেছে। এর আগে নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর এ্যান্ড্রু ক্যুমো বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে যারা গাড়ি অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে অথবা লুটতরাজে লিপ্ত হয়েছিল- তাদেরকে জামিন দেওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ মেয়াদে শাস্তি দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর