শনিবার, ৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে

ড. আলী রীয়াজ

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েন্স স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এবার জাতীয় আকারে ছড়িয়ে পড়ার কয়েকটি কারণ আছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উত্থান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণ এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক সংকট। এগুলোই এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে উসকে দিয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উদার গণতান্ত্রিক দেশ বলেই লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিতে পারছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটছে। মূলত পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের বাড়াবাড়ির কারণে কিছু আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের মনে যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষোভ ছিল, এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভ বেশি ফুটে উঠে আসছে। এটা এক অর্থে নতুন নয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিভিন্ন সময়েও এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ আমরা  দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেন, অবশ্যই এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক। তবে ট্রাম্প যেভাবে বিরোধী পক্ষের উসকানিতে এ বিক্ষোভ বলছেন, সেই ভাবে রাজনৈতিক নয়। সবাই যেসব সংস্কারের কথা বলছেন, সেগুলোতে রাজনৈতিকই। তবে কোনো দলীয় আন্দোলন এটি নয়। এটা নাগরিকের অধিকারের লড়াই। যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই। তবে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর নির্যাতিত হওয়ার সংখ্যাটা অনেক বেশি। তারাই সবচেয়ে বিপদের মুখেও পড়ছে। তাই পুলিশি সংস্কারটা জরুরি। এই সংস্কারের চেষ্টাও হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু ফেডারেল ও স্টেট সরকারগুলো সেভাবে উদ্যোগ নেয়নি। সরকার ও রাজনীতির বিশেষজ্ঞ ড. আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশিং সিস্টেমটা মূলত স্টেট সরকার নির্ভর। যেমন নিউইয়র্কের পুলিশ, ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ। তাই স্টেট সরকারগুলো উদ্যোগ না নিলে পুলিশের সংস্কার সম্ভব নয়। ফেডারেল সরকার কিছু ভূমিকা রাখতে পারে। সেটা হলো ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিভিল রাইটসের অংশটাকে শক্তিশালী করা। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় সেটা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় এসে সেটা আবার দুর্বল করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবার সাংবিধানিক ক্ষমতার বাইরে গিয়েও নানান কিছু করছেন। তিনি আর্মিকে টহল দেওয়ার জন্য বলছেন। প্রেসিডেন্ট সেটা পারেন না। প্রেসিডেন্ট ডিসিতে আর্মি টহল দিতে বলতে পারেন। সেটা ইতিমধ্যেই দিচ্ছে। আসলে ট্রাম্প সেনা বাহিনীকে তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছেন। এটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই উদ্বেগ পেন্টাগনে দায়িত্ব পালনকারীদের কাছ থেকে আসছে। ড. আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সামনে নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এতদিন ভাবছিলেন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা ভালো সে কারণে তার পুনরায় নির্বাচিত হওয়া উচিত। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ না হলে প্রেসিডেন্টরা পুনর্নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এখন অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়েছে তার কারণ কভিড-১৯। অনেক মানুষ এখন বেকার। তাই নির্বাচনের আগে ট্রাম্প চাইছেন অন্য কোনো ইস্যু তৈরি করে জনগণকে দ্বিধা বিভক্ত করতে। এ কারণেই তিনি শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদিতার বিষয়টিকে বার বার সামনে নিয়ে আসছেন। তাই ট্রাম্পের সমর্থকরা এখনো ট্রাম্পের সঙ্গেই আছেন। তিনি বলেন, সারা বিশে^ই অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘুরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। বাংলাদেশেও সেটা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৪০০ বছর ধরে বর্ণবাদ সমস্যা চলছে। ব্রিটেনেও কাঠামোগত বর্ণবাদ সংকট বিরাজ করছে। সবাই এখন এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরির চেষ্টা করছেন। আমি এটাকে বলি, নাগরিক সমতার অধিকারের লড়াই। সেক্ষেত্রে দেশের সীমা খুব একটা বড় বাধা হতে পারে না। নাগরিক হিসেবে যে যেখানেই আছে সেখান থেকেই লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারে। মূলত নাগরিক অধিকারের মধ্যে আছে আইনের চোখে সমানভাবে     বিবেচিত হওয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর