সোমবার, ৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ছয় দফাকে মানুষ বাঁচার অধিকার হিসেবে লুফে নিয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৬ দফাকে বাংলার মানুষ বাঁচার অধিকার হিসেবে লুফে নিয়েছিল। কারণ পাকিস্তান নামক দেশ হওয়ার পর শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতি সব দিক থেকে আমরা (বাঙালিরা) বঞ্চনার শিকার হতাম। বঙ্গবন্ধু সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তার এই সংগ্রামের পথ বেয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৬ দফা কেন দেওয়া হয়েছিল? আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দাবি উথাপন করেছিলেন। ৬ দফা দাবির পটভূমি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ হয়। আমরা পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ তদানীন্তন পূর্ববঙ্গ সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। একটা প্রদেশ পাকিস্তানের, তাকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থাই পাকিস্তানি শাসকরা নেয়নি। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় যেন মনে হলো ভারতের দয়ার ওপর আমরা পড়ে আছি। এই যুদ্ধের পর একটি গোলটেবিল বৈঠক ডাকা হয় লাহোরে। সর্বদলীয় বিরোধী দল এই গোলটেবিল বৈঠক ডাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গোলটেবিল বৈঠকে জাতির পিতা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নিয়ে যান। সেখানে তিনি এই ৬ দফা দাবি উথাপন করেন। যে দাবির মূল বক্তব্য ছিল, প্রদেশ হিসেবে এই দেশের, আমাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করা। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা। এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা এবং প্রতিরক্ষার দিক থেকে এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত করা। সেই সঙ্গে বাঙালির যে অস্তিত্বের দাবি সে দাবিটা তুলে ধরা হয়। এটা তুলে ধরার সময় অনেকে বাধা দেন। তিনি বলেন, ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা আন্দোলনের জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল, সে কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে পাকিস্তানী শাসকদের হাতে শ্রমিক নেতা মনু মিয়া, আবুল হোসেন, শফিক সামছুলসহ যারা জীবন দিয়েছিলেন, আমি তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় ফিরেও বঙ্গবন্ধু সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই দাবি তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে ৬ দফা গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনেও এই ৬ দফা গ্রহণ করে। তিনি আরও বলেন, ৬ দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সারা দেশে এটা প্রচার করার উদ্যোগ নেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সম্পৃক্ত করে সারা দেশে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে তিনি ৩২টা মিটিং (বঙ্গবন্ধু) করেছিলেন সারা দেশে। কিন্তু এর মধ্যেই যখন যেখানে যেতেন তাকে গ্রেফতার করা হতো। এভাবে আটবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে যে জনসভা করেন, সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর জামিন দেওয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুই নয়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে তখন আন্দোলন শুরু হয়। ১৩ মে প্রতিবাদ সভা হয়। এরপর ১৬, ১৭, ১৮ মে প্রতিদিনই প্রতিবাদ চলতে থাকে। তিনি আরও বলেন, ৬ দফা দাবিটা জনগণ লুফে নিয়েছিল। এটা তারা নিয়েছিল বাঁচার অধিকার হিসেবে এবং মূলত তাই-ই ছিল। এদেশের মানুষ ৬ দফাকে শুধু দ্রুত সমর্থনই করেনি, স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে তারা নিজেদের দাবি হিসেবে নিয়েছিল। ৬ দফা বাংলার মানুষের মুক্তির দাবি হিসেবে সবার সামনে উদ্ভাসিত হয়েছিল।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সরকার বসে ছিল না। নানাভাবে চক্রান্ত করতে থাকে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একের পর এক গ্রেফতার করতে থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষও আরও বেশি সচেতন, সুসংগঠিত হতে থাকে। অবশ্য কিছু দালাল ছাড়া। সব সময় কিছু দালাল থাকে, এটাই সমস্যা। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। মামলাটি রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব। মামলার মূল অভিযোগ ছিল যে, আসামিরা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এই মামলার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আবার প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। সেই সময় গণঅভ্যুত্থান হলো, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করল। এই সংগ্রামের ফল হলো আইয়ুব খান এক পর্যায়ে বাধ্য হন মামলা প্রত্যাহার করতে। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে তারা মুক্তি দেয়। তিনি বলেন, এই ৬ দফার ভিত্তিতেই সত্তরের নির্বাচন হয়। যে নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কাজেই ৬ দফা ও ৭ জুন আমাদের স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি অর্জন রক্তের বিনিময়ে আমাদের পেতে হয়েছে। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। বৃথা যেতে পারে না। যায়নি। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। এরপর আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হয়েছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস নামের একটি ভাইরাস এসে আজকে সবার জীবনযাত্রা স্থবির করে দিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে এই সমস্যা। আমি আশা করি, আমাদের দেশের প্রত্যেকটা মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম মেনে চলবেন। ইনশাল্লাহ এখান থেকে আমরা মুক্তি পাব।

সিআরপিকে প্রধানমন্ত্রীর ১০ কোটি টাকা অনুদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)-কে ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সিআরপিকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, যাতে এটি ভালোভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করতে পারে।

পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা, সহযোগিতা এবং পুনর্বাসনের জন্য দেশে ১৯৭৯ সালে সিআরপির যাত্রা শুরু হয়। সংস্থাটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের বিশেষ ধরনের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং শারীরিক, মানসিক, সহায়তা প্রদান করে। সিআরপি দেশে স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনর্বাসনে দক্ষ কর্মী বিকাশে সহায়তা করছে।

সর্বশেষ খবর