মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যু ৯০০ ছাড়াল

এক দিনে মারা গেলেন ৪২ জন, শনাক্ত ২৭৩৫

বিশেষ প্রতিনিধি

মৃত্যু ৯০০ ছাড়াল

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শাখাওয়াত হোসেন ও পুলিশ সদস্য মো. আলমগীর হোসেনসহ আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ৪২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এখন পর্যন্ত এটিই এক দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে দেশে করোনায় মারা গেছেন ৯৩০ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুই হাজার ৭৩৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬১টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৪৪টি। এখন পর্যন্ত চার লাখ ১০ হাজার ৯৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। নাসিমা সুলতানা জানান, মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে চারজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রামে আটজন, খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগে দুইজন করে, সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে একজন করে রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪২ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং নয়জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ এবং নারী ২৩ শতাংশ। বুলেটিনে বলা হয়, সব মিলিয়ে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ৫০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৫৭ জন। এ নিয়ে সর্বমোট ১৪ হাজার ৫৬০ জন সুস্থ হয়েছেন।

আরও এক চিকিৎসকের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন রাজধানীর বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. শাখাওয়াত হোসেন। দুই সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হন ডা. শাখাওয়াত। এরপর তিনি বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় গতকাল সকালে মারা যান তিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ মে থেকে তিনি এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস (এফডিএসআর)। সংগঠনটি জানায়, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২১ জন চিকিৎসক মারা গেছেন।

পুলিশের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই বাহিনীতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জন হলো। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, মো. আলমগীর হোসেন নামে ৫৫ বছর বয়সী একজন কনস্টেবল রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আলমগীর ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের হাজারীবাগ পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার মাজারদিয়া গ্রামে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ বাহিনীতে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ২০৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই হাজার ৭৬৭ জন।

সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং এর সব শেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-

খুলনা : শরীরে করোনাভাইরাস নিয়ে রোগীর অস্ত্রোপচার করায় খুলনায় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চারটি অপারেশন থিয়েটার বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে হাসপাতালের জরুরি অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। একই সঙ্গে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ লকডাউন করা হয়েছে। হাসপাতালের তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, একজন নার্স, একজন অফিস সহকারী ও একজন মেডিকেল টেকনেশিয়ান করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র গোস্বামী জানান, গত দুই দিনে খুলনা ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তিনজন চিকিৎসকসহ ছয়জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত দুজন চিকিৎসক শনিবার অপারেশন থিয়েটারে জরুরি অস্ত্রোপচার করেছেন। রবিবার নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা শনাক্ত হলে ঝুঁকি এড়াতে গতকাল থেকে হাসপাতালের চারটি অপারেশন থিয়েটারে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত করতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে ডিজইনফেকশন ব্যবস্থা।

বগুড়া : জেলায় নতুন করে আরও ১৬১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯০ জনে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বগুড়া সদরের বাসিন্দা রয়েছেন ১১৮ জন। এ ছাড়া শাজাহানপুরের ১১ জন, গাবতলীতে ১১ জন, শিবগঞ্জে পাঁচজন, কাহালুতে তিনজন, সোনাতলায় আটজন, শেরপুরে একজন, দুপচাঁচিয়ায় দুইজন এবং নন্দীগ্রাম উপজেলায় দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। বগুড়া সদরের বাসিন্দাদের মধ্যে অধিকাংশের বাড়ি চেলোপাড়া, জলেশ্বরীতলা, নাটাইপাড়া, কাটনারপাড়া, ঠনঠনিয়া ও সেউজগাড়ী এলাকায়।

দিনাজপুর : রবিবার রাতে চিরিরবন্দরের বাসিন্দা কমল চন্দ্র ওরফে নবাব (২৯) নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এদিকে দিনাজপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় এক সাংবাদিকসহ আরও ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুর সদরে চারজন, বিরামপুরে চারজন, বিরলে একজন ও পার্বতীপুরে একজন রয়েছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩১৫ জনে।

মাগুরা : জেলায় নতুন করে মৃত দুই ব্যক্তিসহ পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মৃত দুজনের বাড়ি শহরের পারনান্দুয়ালীর পূর্ব মুন্সিúাড়া ও শ্রীপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। গতকাল খুলনা মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে আসা নমুনা রিপোর্টে তাদের করোনা পজিটিভ এসেছে। একই সঙ্গে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ তিন ব্যক্তির শরীরে করোনা পজেটিভ এসেছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। হোম আইসোলেশনে আছে ১৬ জন। একজন ঢাকায় প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন।

ফেনী : জেলায় নতুন করে ৪৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ নিয়ে ফেনীতে মোট আক্রান্ত ৩১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। সুস্থ হয়েছেন ৬৮ জন। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে ফেনী সদরে ২৯ জন, ছাগলনাইয়ায় নয়জন, দাগনভূঞায় সাতজন, সোনাগাজীতে তিনজন ও অন্য এলাকায় একজন রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর