বুধবার, ১০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসক মারা গেলেন তিন হাসপাতাল ঘুরে

ঢাকায় আরও একজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও বরিশাল

চিকিৎসক মারা গেলেন তিন হাসপাতাল ঘুরে

ঢাকায় তিন হাসপাতাল ঘুরে অক্সিজেন না পেয়ে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন বরিশালের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা. মো. আনোয়ার হোসেন। সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানী বাড্ডা এলাকার এএমজেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।

ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বরিশালের আধুনিক রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বরিশাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক বরিশালের আজকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। করোনার প্রকোপ শুরুর পর নগরীর স্বনামধন্য চিকিৎসকরা লাপাত্তা হলেও এক দিনের জন্যও রোগীর সেবায় পিছপা হননি তিনি। সামনের সারিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেন ডা. আনোয়ার। দীর্ঘদিন অ্যাজমায় ভুগছিলেন তিনি। রবিবারও তার হাসপাতালে রোগীদের তিনি অস্ত্রোপচার করেন। সব শেষ সোমবার সকালে নিজ প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে রোগী দেখছিলেন তিনি। সে দিন রোগী দেখতে দেখতেই সকাল ৮টার দিকে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নির্বিচারে রোগী দেখায় করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন আশঙ্কায় তিনি নিজ থেকেই করোনা পরীক্ষার কথা বলেন সহকর্মীদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন বিকালেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালের পরিচালক অ্যাডভোকেট লস্কর নুরুল হক জানান, অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় সোমবার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে প্রথমে তাকে ঢাকার এভার কেয়ার, পরে স্কয়ার এবং আনোয়ার খান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ সুবিধা না পাওয়ায় রাত ৩টার দিকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর বাড্ডা এলাকার এএমজেড হাসপাতালে। এএমজেড হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা পাওয়া গেলেও ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যান ডা. আনোয়ার হোসেন।

ডা. আনোয়ার সম্পাদিত দৈনিক বরিশালের আজকালের খবর পত্রিকার বার্তা সম্পাদক খান স্বপন জানান, ঢাকায় হাসপাতাল খুঁজতে খুঁজতে অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। অক্সিজেনের অভাবে মারা যান তিনি।

খান স্বপন জানান, ডা. আনোয়ার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে নিজেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। তবে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।

গতকাল তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। এ ছাড়া ডা. আনোয়ারের পরিবারের সদস্য ও তার সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

গতকাল সকালে নগরীর বান্দ রোডের রাহাত-আনোয়ার হাসপাতাল চত্বরে প্রথম জানাজা এবং দুপুর ১২টায় ঝালকাঠীর বিনয়কাঠী ইউনিয়নের নাক্তা গ্রামের আজিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মা মরহুমা হালিমা বেগমের পাশে তাকে মরদেহ দাফন করা হয়। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ডা. মো. আনোয়ার হোসেনের অকালমৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে। পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেছেন বরিশাল প্রেস ক্লাবের নেতারা।

ইমপালস হাসপাতালের চিকিৎসকের মৃত্যু : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেসিওলজি) অধ্যাপক ডা. জলিলুর রহমান খান মারা গেছেন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সসিবিলিটির (এফডিএসআর) যুগ্ম সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডা. জলিলুর রহমান খান গত তিন দিন ধরে ইমপালস হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে ছিলেন। ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী জানান, ডা. জলিলুর রহমান খানকে নিয়ে করোনায় এ পর্যন্ত ২৪ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১০৮ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর