বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

হাজার ছাড়াল মৃত্যু সর্বোচ্চ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্ত

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ১২জনে। একই সময়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৯৬৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হলে এরমধ্যে তিন হাজার ১৯০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হলেন ৭৪ হাজার ৮৬৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬৩ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ১৫ হাজার ৮৯৯ জন। গতকাল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৬৫টি। এখন পর্যন্ত চার লাখ ৪১ হাজার ৫৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ১৯০ জন। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৫ শতাংশ। নাসিমা সুলতানা জানান, মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে তিন জন, ১১ থেকে ২০ বছরের একজন রয়েছেন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে সাতজন, বরিশাল বিভাগে দুজন এবং সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং চারজন নারী রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৫ জন এবং বাসায় মারা গেছেন ১২ জন। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া এক হাজার ১২ জনের মধ্যে ৭৭ শতাংশ পুরুষ এবং ২৩ শতাংশ নারী। সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং তার সবশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা- দিনাজপুর : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানায় কর্মরত মো. এনামুল হক (৩৮) নামে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। বীরগঞ্জ থানার এসআই নিমাই কুমার রায় জানান, ২ জুন অসুস্থ হয়ে মো. এনামুল হক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে তার পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়লে ৬ জুন তাকে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে ভোরের দিকে তিনি মারা যান। বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মতিন প্রধান জানান, পুলিশ সদস্য মো. এনামুল হক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি পঞ্চগড় জেলার অধিবাসী ছিলেন। এদিকে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫জ ন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩৮জনে। যার মধ্যে পুরুষ ২৪১ জন, নারী ৮২ জন ও শিশু ১৫ জন রয়েছে। বর্তমানে ১৯৯ জন হোম আইসোলেশনে এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ২৭ জন, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন এবং মারা গেছেন ৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১০১ জন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল কুদ্দুছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৮ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন। বর্তমানে জেলায় রোগী রয়েছেন ১৬জন। এদের বাড়ি জেলার গোমস্তাপুর, নাচোল ও শিবগঞ্জে। সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, আক্রান্তরা সবাই উপসর্গহীন এবং তাদের মধ্যে ১৩জন আইসোলেশনে ও তিনজন হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মানিকগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জে নতুন করে আরও ১২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩৭৩ জন। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ঘিওর ও সিংগাই উপজেলায় চারজন করে এবং সাটুরিয়া, হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলায় রয়েছেন একজন করে। মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুন নাহার বন্যা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪টির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। রিপোর্টে ১২টির পজিটিভ পাওয়া যায় এবং ১৪২টির নেগেটিভ ফলাফল আসে। নওগাঁ : জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল তিনজনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আরও চারজনের শরীরে। আক্রান্ত চার জনই সদর উপজেলার। এদের মধ্যে তিনজনই ইসলামী ব্যাংক নওগাঁ শাখার কর্মকর্তা এবং অন্যজন শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকাস্থ মগবাজার এলাকায় একটি ব্যাংকের সিকিউিরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে তিনি গত ৫ জুন বাড়িতে আসেন। পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে ৮ জুন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৯ জুন সন্ধ্যায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নতুন আক্রান্ত এই চারজনসহ নওগাঁ জেলায় কভিড-১৯ এ সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬৩ জন-এ। কুমিল্লা : জেলার চান্দিনায় উপজেলা পরিষদের দুজন কর্মকর্তা, কৃষি ব্যাংক চান্দিনা শাখার একজন কর্মকর্তাসহ জেলায় নতুন করে আরও ৮৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬০৩ জন। কুমিল্লা জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন জানান, বুধবার কুমিল্লা নগরীর ২৫ জন, চৌদ্দগ্রামে ৩৪ জন, মনোহরগঞ্জে একজন, চান্দিনায় সাতজন, আদর্শ সদরে দুজন, মেঘনায় দুজন, দাউদকান্দিতে দুজন, নাঙ্গলকোটে চারজন, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ ও লালমাইয়ে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূূত্র জানায়, বুধবার পর্যন্ত কুমিল্লায় মোট ১৩ হাজার ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ১১ হাজার ১১৭ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ২৭১জন আর মারা গেছেন ৪৬ জন। মেহেরপুর : জেলায় নতুন করে আরও দুই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা হলেন, সদর উপজেলার হিজুলী গ্রামের নেছা খাতুন (৫০) ও শহরের কোর্ট পাড়ার মারফিয়া খাতুন (৫০)। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, করোনায় আক্রান্ত নেছা খাতুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুদিন আগে তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ছাড়া শহরের কোর্ট পাড়ার মরফিয়া খাতুন তার নিজ বাড়িতে রয়েছেন সেখানে তার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দীন জানান, মেহেরপুর জেলা থেকে ৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া ল্যাবে পাঠানো হয়। এরমধ্যে দুজন করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করা হয়। মেহেরপুর জেলায় মোট করোনায় আক্রান্তর সংখ্যা ৩২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন সাতজন ও মারা গেছেন দুজন। গোপালগঞ্জ : গতকাল সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরও ১৪ জনসহ মোট ৩০৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন ১৪ জনের মধ্যে রয়েছেন সদর উপজেলায় একজন, মুকসুদপুরে তিনজন, কোটালীপাড়ায় একজন, টুঙ্গিপাড়ায় একজন ও কাশিয়ানী উপজেলায় আটজন। জেলার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩৭ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ও বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭০ জন। আর মারা গেছেন দুজন।

সর্বশেষ খবর