শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে প্রশ্ন করা হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে প্রশ্ন করা হবে না

দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, নতুন অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এই আইনি নির্দেশনা আছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এমন সুযোগ নিতে করদাতাদের অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে জমি, ফ্ল্যাট, বিল্ডিং ও অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজে। এই সুবিধা নিতে ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। নেই কোনো জরিমানা। অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি কমবে। এই পদক্ষেপে অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থপ্রবাহ, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধির আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। নতুন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে অধিক পরিমাণে রাজস্ব আয় ও বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কমকান্ড গতিশীল রাখতে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আমদানি ও রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং এবং ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার আর কর ফাঁকি বন্ধের পদক্ষেপও নিয়েছেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আলোকে বিনিয়োগ ভুয়া ও অর্থ পাচার প্রমাণিত হলে ৫০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।

এই বাজেটে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটায় খুশি আবাসন উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অপ্রদর্শিত আয়ের ব্যাপারে সরাসরি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানাই। বিনা প্রশ্নে এ অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। ফলে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ আসবে। করোনাভাইরাসের কারণে বিধ্বংস অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে এ অর্থ বিশেষভাবে অবদান রাখবে। দেশ থেকে অর্থ পাচারের প্রবণতা বৃহৎ আকারে কমবে। দেশের টাকা দেশেই বিনিয়োগ হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’ দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন বিনা প্রশ্ন ও বাধাহীনভাবে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সুবিধা দাবি করে আসছিল। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সেই দাবি পূরণ হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এ কারণেই হয়তো অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘কেবল রাজস্ব আহরণই নয়, বরং করোনাভাইরাসজনিত চলমান সংকটের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করা সময়ের দাবি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দারও পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে আমাদের অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে রাজস্বনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। অর্থনীতিতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি এবং তা বজায় রাখার নিমিত্তে পর্যাপ্ত সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং অন্যদিকে বেসরকারি খাতেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল রাখার ঘোষণা এলো করোনাকালের এই বাজেটে।

অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ প্রশ্নে বাজেটে বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে করদাতার রিটার্ন দাখিলে অজ্ঞতার কারণে তাদের কিছু অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নের এই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ প্রদান এবং অর্থনীতির স্রোতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশের আয়কর প্রণোদনা-সংক্রান্ত দুটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ওই দুটি ধারার প্রথমটিতে বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, নতুন অর্থবছরের মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত অর্থ জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। আর দ্বিতীয় ধারাটিতে বলা হয়, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম চালিকাশক্তি পুঁজিবাজার। একে গতিশীল করার লক্ষ্যে তিন বছর লক-ইনসহ কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে নতুন অর্থবছরের মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা ১০ শতাংশ করহারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকি বন্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলা হয়, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং, ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর। এ প্রবণতা রোধকল্পে বিদ্যমান অন্য সব বিধানের পাশাপাশি আয়কর অধ্যাদেশে নতুন একটি ধারা প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং করে পাচার হয়েছে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হবে, এর ওপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হবে। আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং ও ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং কর ফাঁকি রোধে প্রস্তাবিত বিধান অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলেও আশাবাদী অর্থমন্ত্রী।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রশংসা করে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রাচীনতম বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) বলেছে, যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার বা ওভার ইনভয়েসিং করা হবে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া প্রমাণিত হবে, এর ওপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব অর্থ পাচার রোধে ভূমিকা রাখবে। দেশীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশীয় অপ্রদর্শিত অর্থ বিদেশে পাচার বন্ধে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র ও পুঁজিবাজারে সহজ শর্তে বিনিয়োগ করার সুযোগ প্রদান বর্তমান করোনা দুর্যোগের সময়ে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে ক্যাশ, ব্যাংক ডিপোজিট, ফিনানশিয়াল স্কিম, ইন্সট্রুমেন্ট, সেভিং ইন্সট্রুমেন্ট ও সার্টিফিকেটে অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে ব্যয় করার সুযোগ দিলে পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় ব্যবহৃত না হয়ে ব্যাংকে সঞ্চয় বাড়বে।

সর্বশেষ খবর