শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

যেভাবে চাঙ্গা হবে করোনা আক্রান্ত অর্থনীতি

সরকারি ব্যয় ও ব্যাংকের টাকায় ভরসা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাক্রান্ত দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে অভ্যন্তরীণ ভোগ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আর সেটি করতে গিয়ে সরকারের ব্যয় আর ব্যাংকের টাকায় ভরসা রাখতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, কভিড-১৯ অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে সেটি মোকাবিলায় মূলত তিন ধরনের পদক্ষেপ থাকবে। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় বাড়ানো ছাড়াও শিল্প খাত চাঙ্গা করতে প্রণোদনা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করার উদ্যোগ রয়েছে। সরকারের এই পুনরুদ্ধার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে এরই মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজের অর্থের প্রায় পুরোটাই আসবে ব্যাংক খাত থেকে। আবার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে আরও প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রণোদনা ও ঘাটতি মিলিয়ে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় পোনে ২ লাখ কোটি টাকা বেরিয়ে যাবে। ফলে করোনাক্রান্ত অর্থনীতি বাঁচাতে সরকারি ব্যয় আর ব্যাংকের ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রীকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি মোট বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। করোনা সংকটের কারণে সেটি কমিয়ে ২০ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল ২৪ দশমিক ২ শতাংশ, কমিয়ে প্রায় অর্ধেক ১২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগে যে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, সেটি মোকাবিলায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া আপাতত অর্থমন্ত্রীর হাতে কোনো বিকল্প নেই। এজন্য, অভ্যন্তরীণ খাত চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যক্তি খাতের ভোগ ও চাহিদা বাড়াতে বাজেটে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি এমনভাবে করা হবে, যাতে করে সেটি সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি না করে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেটি যাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি না করে সে বিষয়েও নজর থাকবে। আর ব্যাংকিং খাতের তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সুদের হার কাজে লাগানো হবে। তবে দ্বিতীয় বিকল্পটিও হাতে রেখেছে সরকার। সেটি হচ্ছে টাকা ছাপিয়ে ঘাটতি সামাল দেওয়া। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এই বিকল্পটি ব্যবহার করা হবে না বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো। সূত্রগুলো জানায়, সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি আরও একটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেটি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো। প্রস্তাবিত বাজেটে বিলাসী কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ রয়েছে। দেশের মানুষ যাতে অপ্রয়োজনে বিদেশ না যায়, বিশেষ করে বিনোদন ভ্রমণ, কেনাকাটা এসব খাতে খরচের রাশ টেনে ধরা হবে। এ লক্ষ্যে বিমান ভাড়ার ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। বিলাসী পণ্যে করও বাড়ানো হয়েছে। আর ইন্টারনেট, মোবাইলে বুদ হয়ে থাকা দেশের মানুষকে আরও বেশি কর্মমুখী করতে ইন্টারনেট মোবাইল ফোনে করহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্প খাতকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ১৯টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও ব্যবসায়িক পরিবেশকে পুনরুজ্জীবীত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আর বাজেটে সম্প্রসারণ করা হয়েছে সুরক্ষামূলক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, যার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাসকারী, দিনমজুর এবং যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে নগদ সহায়তা ছাড়াও দেওয়া হবে খাদ্য সহায়তা ও গৃহনির্মাণ এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের পথ তৈরি হবে।

সর্বশেষ খবর