শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ মৃত্যু আক্রান্তের রেকর্ড

২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪৬ জন, আক্রান্ত ৩৪৭১

বিশেষ প্রতিনিধি

সর্বোচ্চ মৃত্যু আক্রান্তের রেকর্ড

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশে প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ১ হাজার ৯৫ জনের মৃত্যু হলো। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৪৭১ জন। এটিও এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮১ হাজার ৫২৩ জনে।

গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন তিনটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিসহ মোট ৫৯টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫০টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৯০টি। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৭৩ হাজার ৩২২টি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৪ শতাংশ। নতুন করে মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৭ জন, নারী ৯ জন। বয়স বিবেচনায় ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে তিনজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন এবং ১০০ বছরের ঊর্ধ্বে একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩২ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ১৪ জন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন, রংপুরে ৫ জন, সিলেটে তিনজন, বরিশালে তিনজন, রাজশাহীতে দুজন, ময়মনসিংহে দুজন এবং খুলনায় একজন মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন মারা গেছেন। ১৫ হাজার ৭৭২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৮৭ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা শুধু বাড়েইনি, হয়েছে রেকর্ডও। এর আগে দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ জনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল, যা গত ৯ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল ৩১৯০ জনের, যা গত ১০ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়।

 

সারা দেশের কোথায় কোথায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং নতুন রোগী শনাক্ত হলেন এবং তার সর্বশেষ খবর জানিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা-চট্টগ্রাম : জেলায় নতুন করে আরও ২০৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইয়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ল্যাবে ৭৩৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এ ফল আসে। এদিন থেকে চবি ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ল্যাব থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফল যুক্ত হচ্ছে। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে ২৬৩টি নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ এসেছে ২৬ জনের, এর মধ্যে মহানগরী এলাকার ১০ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ১৬ জন আছেন। সিভাসু ল্যাবে ১৫৮ নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ মিলেছে ৪৪ জনের, এর মধ্যে মহানগরী এলাকার পাঁচ এবং বিভিন্ন উপজেলার ৩৯ জন রয়েছেন। চবি ল্যাবে পরীক্ষা হয় ১১৭টি নমুনা। এতে পজিটিভ মিলেছে ৫৮ জনের। এর মধ্যে একজন বাদে সবাই বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। নগরীর বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো পরীক্ষা করা ১৩৮ নমুনায় পজিটিভ মিলেছে ৭২ জনের এবং এরা সবাই মহানগরীর বাসিন্দা। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীক্ষা হয় চট্টগ্রামের ৬২টি নমুনা। এর মধ্যে বিভিন্ন উপজেলার সাতজনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত সংখ্যা দাঁড়াল চার হাজার ৫৯৮ জনে। দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে একজন চিকিৎসকসহ আরও ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দিনাজপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২৭২ জন, নারী ৯৩ জন ও শিশু ১৭ জন রয়েছে। বর্তমানে ২২১ জন হোম আইসোলেশনে এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ২৭ জন, হাসপাতালে ভর্তি ১৩ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনসহ এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১৫ জন। এ তথ্য জানিয়েছেন দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল কুদ্দুছ।

শেরপুর : জেলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরও ১১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ১৩০ জনের পরীক্ষায় এই ১১ জনের পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক ও শেরপুর সদর হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৫৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। এ পর্যন্ত জেলায় ২৭৫৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫৪৫টির পরীক্ষায় এই ১৫৩ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৭৬ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন দুজন। যশোর : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় নতুন ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ঘোষিত করোনা পরীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ল্যাবে মোট ২৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪ জনের করোনা পজিটিভ এবং ২৬৫ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। এর মধ্যে যশোরের ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনের, নড়াইলের ২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের, মাগুরার ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের, সাতক্ষীরায় ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সাতজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ফরিদপুর : জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে তারা মারা যান। গতকাল পর্যন্ত এ উপজেলায় মোট ১৮৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে মারা গেছেন ছয়জন আর ছয়জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় নতুন করে আরও ৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬১৯ জনে দাঁড়াল। বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া পরীক্ষার ফলাফলে নতুন করে ওই ৩৬ জন রোগী শনাক্ত হন। উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন।

সর্বশেষ খবর