সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রীতে বাজার সয়লাব

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও কাজ হচ্ছে না

আলী আজম

ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রীতে বাজার সয়লাব

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দেদার বিক্রি হচ্ছে ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রী। করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষাকারী এসব সামগ্রী মানুষ যাচাই না করেই কিনে ব্যবহার করছেন। এসব সুরক্ষা সামগ্রী নিরাপত্তার বদলে জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। জানা গেছে, পিপিই, মাস্ক, অক্সি মিটার, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে নকল ও মানহীন পণ্য যেখানে-সেখানে বিক্রি হচ্ছে। দামও লাগামহীন। যদিও এসব পণ্যসামগ্রীর লাগাম টানতে বিভিন্ন বাহিনী নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এসব ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রীর বিক্রি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মতো জীবাণু থেকে রক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। কিন্তু এসব সামগ্রী নকল করে বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বিভিন্ন কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতসহ বিভিন্ন দোকানে। এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ তো দূরের কথা, উল্টো সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পণ্য ব্যবহার করে অনেকে ভাবতে পারেন তিনি সুরক্ষিত আছেন, কিন্তু নকল পণ্য ব্যবহারের কারণে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়ে মানুষকে হুমকির মুখে ফেলছে।

অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ হাসপাতালে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া গ্লাভস, মাস্কসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে তা রিসাইকেল করে পুনরায় বিক্রি করছেন। সংশ্নিষ্টদের পরামর্শ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দাম ও মান নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন আইনি নজরদারি দরকার। নতুবা পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। করোনার এই দুর্যোগেও অসাধুরা মানুষের বাঁচা-মরা দেখবে না, হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি নকল পণ্য ব্যবহারে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। ব্যবহারকারীরা বলছেন, যারা মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পকেট কাটছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে ফুটপাথে টেবিল বসিয়ে অস্থায়ী দোকান ও ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ও নকল মাস্ক, হাত জীবাণুমুক্ত করার সামগ্রীসহ বিভিন্ন সুরক্ষা পণ্য। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ এসব সুরক্ষাসামগ্রীই কিনছেন। দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এবং ওষুধের দোকানে নিয়মিত না পাওয়ার সুযোগে এক দল অসাধু ব্যবসায়ী এসব নকল করে বাজারে বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। আসল হ্যাক্সিসল, হ্যান্ড রাবের বোতল সংগ্রহ করে রং মেশানো পানি ভরেও বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। দেখা গেছে, এ ধরনের বেশির ভাগ পণ্যের উৎপাদন ও মেয়াদের কোনো তারিখ নেই। পণ্যগুলো কোন প্রতিষ্ঠান আমদানি করছে, তা-ও কোথাও উল্লেখ নেই। ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা করোনার সুরক্ষা সামগ্রী সব পণ্য পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকা থেকে পাইকারি দামে কিনে এনে বিক্রি করছি। দোকানদার ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাস্তাঘাট থেকে কোনো ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী পণ্য না কিনে রেজিস্ট্রার্ড ওষুধের দোকান থেকে কিনলে আসল পণ্য পেতে পারেন। ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রির অপরাধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ১০ জুন নকল ও অনুমোদনহীন স্যানিটাইজার বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ৪টি দোকানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যমানের নকল ও অনুমোদনহীন স্যানিটাইজার জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, করোনার সুরক্ষা সামগ্রী এবং ওষুধ নিয়ে নানামুখী অনৈতিক বাণিজ্য হচ্ছে। কেউ কেউ ভেজাল ও মানহীন পণ্য তৈরি করছে। আবার কেউ দেশের বাইরে থেকে এনে কয়েকগুণ দাম রাখছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে বেশ কিছু অভিযান চালানো হয়েছে। শিগগিরই আবার ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুুল জব্বার মন্ডল বলেন, গত ২২ মার্চ থেকে ভেজাল সুরক্ষা সামগ্রীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর