সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা নেগেটিভ হয়ে আবার পজিটিভ!

মিলছে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত রোগী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গায়ে জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা এবং সামান্য কাশির উপসর্গ নিয়ে গত ১১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনাভাইরাস পরীক্ষা করান আবদুল্লাহ আল ইমরান ও তার স্ত্রী সানজিদা পারভীন। ওই দিনই জানতে পারেন, তারা দুজনই করোনা ‘পজিটিভ’। এরপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ঘরেই চিকিৎসা নেন তারা। ২০ দিন পর গত ৩১ মে দুজনেরই ‘নেগেটিভ’ প্রতিবেদন আসে। কিন্তু তিন দিনের মাথায় চূড়ান্ত নমুনা পরীক্ষায় স্ত্রী সানজিদা পারভীন নেগেটিভ হলেও আবদুল্লাহ আল ইমরান ‘পজিটিভ’ হন। গাইবান্ধায় সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার ১২ দিন পর আবারও করোনা পজিটিভ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে এক তরুণের। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফ উদ্দিন মুন্সি বলেন, ‘এমন ঘটনা আমরা আরও কয়েকটি পেয়েছি। বিরল এই ঘটনাগুলো নিয়ে আমরা মেডিকেল গবেষণায় কাজে লাগাচ্ছি। নেগেটিভ হওয়ার কয়েকদিন পরেই পজিটিভ আসছে, এর মানে হতে পারে রোগী পুরোপুরি ভাইরাসমুক্ত হননি। অথবা অকার্যকর আরএনএ রয়ে গেছে শরীরে। কেউ কেউ একে বলছেন, রি-ইনফেকশন। এটা আবার রিঅ্যাকটিভেশনও হতে পারে।’ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে রূপ বদলে জটিল হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। মার্চেই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ৭০০ বার স্টেন (রূপ) পরিবর্তন হয়েছে প্রোটিনে। ফলে আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাবু করে ফেলেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। উপসর্গ না থাকলেও করোনা আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস স্টেন অর্থাৎ রূপ পাল্টে জটিল হচ্ছে। আমরা ৩০ মার্চ পর্যন্ত একটা পর্যালোচনা করে দেখেছি ভাইরাসের এক হাজার ৪০২টি নিউট্রেশন হয়েছে। প্রোটিনে ৭০০ বার অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তন হয়েছে। ভাইরাসের ক্লেড, গুচ্ছ বিভাজন অনুযায়ী অনেক ভাগ হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, তাই শুধু যে ভ্যাকসিন বানালেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছে তা নয়। স্টেন পাল্টালে এই আরএনএ ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসের কার্যকারিতা দীর্ঘ ও শক্তিশালী হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভাইরাস স্টেন পাল্টালে মূলত দুটি সমস্যা তৈরি হয়। প্রথমত, ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন স্টেন অনুযায়ী তৈরি হয়। তাই ভাইরাস যদি স্টেন পাল্টে ফেলে তাহলে ওই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের একটি স্টেনে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলে তার শরীরে ওই স্টেনের বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সে ভাইরাসের ওই স্টেনে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয় না। কিন্তু স্টেন পাল্টালে আক্রান্ত ব্যক্তির পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে স্টেন পরিবর্তনের এই তথ্য চিন্তার বিষয়। গাইবান্ধায় পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক তরুণ। যুক্তরাষ্ট্র ফেরত ওই তরুণ ও তার মা গত ২২ মার্চ শনাক্ত হয়ে গাইবান্ধায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১০ এপ্রিল ছেলে (২২) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু সুস্থ হওয়ার ১২ দিনের মাথায় তিনি পুনরায় করোনা আক্রান্ত হন। তাকে আবার গাইবান্ধার আইসোলেশন কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ জানান, মা ও ছেলে মার্চের প্রথম সপ্তাহে গাইবান্ধার বাড়িতে আসেন। গত ২২ মার্চ তাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল। এরপর মা ও ছেলে দুজনেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু ছেলে পুনরায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া কিংবা নেগেটিভ হয়ে আবার পজিটিভ ফল আসার মানে ভাইরাস রূপ পাল্টাচ্ছে। এ ধরনের ভাইরাস রূপ বদলাতে পারে। এতে জটিলতা তৈরি হয়। যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদেরও সচেতন থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর