সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে দাফন গোপালগঞ্জে

মৃত্যুর পর জানা গেল করোনা পজিটিভ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে দাফন গোপালগঞ্জে

বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। গতকাল বাদ আসর তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কেকানিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।

এর আগে গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে ঢাকা থেকে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ  নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরও আগে রাত ১০টায় নিজ বাসায় অসুস্থ হলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর পর তার নমুনা পরীক্ষায় জানা যায়, তিনি করোনা পজিটিভ ছিলেন। দেশেই এই প্রথম মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। শনিবার রাতে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। গতকাল জাতীয় সংসদেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শোক প্রস্তাবে অংশ নিয়ে আলোচনা করেন। শেখ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, নয় কন্যা ও একপুত্র রেখে গেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডে র মাধ্যমে দেশসেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে ব্যস্ততার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী এলাকার (টুঙ্গিপাড়া কোটালীপাড়া) উন্নয়নে প্রতিনিধির দায়িত্ব দেন তাকে। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ ছাড়াও সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যে বৈরী সম্পর্ক ছিল- তা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।  রাষ্ট্রপতি তার শোক বার্তায় বলেন, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারাল। রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ হারাল তৃণমূল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিককে। তিনি আমৃত্যু জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদিকে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৎক্ষণাৎ সিএমএইচে ছুটে যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল, মির্জা আজম, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ। শোক জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্য নেতারা। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহমেদ রাসেল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ আহমেদ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। তারা প্রত্যেকেই মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।  আরও শোক জানিয়েছেন, হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, রাবেতাতুল উম্মাহ বাংলাদেশের সভাপতি হাফেজ মাওলানা এনামুল হক মুসা ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম ও খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুফতি রুহুল  আমীন, বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুস সামাদ, গণদল চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলানা চৌধুরী ও মহাসচিব আবু সৈয়দ, রিলিজিয়ার্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভুইয়া ও সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর লাশ সদর উপজেলার কেকানিয়া গ্রামে আনা হলে তাকে একনজর দেখার জন্য এলাকার মানুষ ছুটে আসেন। সবার প্রিয় ‘আবদুুল্লাহ’ ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের লোকজন শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর এই মৃত্যুতে। জানাজা ও দাফনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারের সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা, গ্রামবাসী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষিত কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর