সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেড়েই চলছে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন চিকিৎসক, একজন স্কুলশিক্ষকসহ আরও ১৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একজন, দিনাজপুরে একজন, কুমিল্লায় দুজন, মাদারীপুরে একজন, চাঁদপুরে ছয়জন, মেহেরপুরে একজন, কক্সবাজারে দুজন, পটুয়াখালীতে দুজন, নেত্রকোনায় একজন, পঞ্চগড়ে একজন, বরিশালে একজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী-  চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সাদেকুর রহমান নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ডা. সাদেকুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার ডা. সাদেকুরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এ ছাড়া তার করোনার বিভিন্ন উপসর্গ ছিল।

শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে নমুনা দেওয়ার এক দিন পর মোস্তাফিজুর রহমান (৭২) নামের অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঘোড়াঘাট উপজেলার বিন্যাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। গতকাল ভোরে ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকিপুর ইউপির বিন্যাগাড়ি গ্রামে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে।

কুমিল্লার চান্দিনায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে জসিম উদ্দিন নামের একজন প্রবাসী যুবক ও জ্যোতি রানী শর্মা নামের একজন গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। চান্দিনা উপজেলার হারং গ্রামের নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয় জসিম উদ্দিনের। একই দিন বিকালে মৃত্যু হয় জ্যোতি রানী শর্মার। শনিবার রাতে উভয়ের লাশ দাফন ও সৎকার করে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লিটন সরকারের নেতৃত্বে ১০১ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী টিম। মাদারীপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুর শহরের পানিছত্র আলজাবির উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় আবদুল লতিফ হাওলাদার (৬৫) শনিবার রাত ৮টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। মাদারীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ইকরাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদপুরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছয়জন মারা গেছেন। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে তিনজন সদর উপজেলার এবং তিনজন হাজীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা এলাকার মজিবুর রহমান (৬৫) গতকাল ভোর ৫টায়, সদর উপজেলার কল্যান্দী গ্রামের রশিদ আখন্দ (৭০) শনিবার দিবাগত রাত দেড়টায় ও বালিয়া ইউনিয়নের বিল্লাল শেখ (৪২) শনিবার রাত ৯টায় নিজ বাড়িতে মারা যান। এদিকে হাজীগঞ্জ পৌরসভার বলাখালের সিদ্দিকুর রহমান (৬৫) গতকাল সকালে, ধোয়াগন্ডা গ্রামের মিজানুর রহমান (৮৯) শনিবার দিবাগত রাত ২টায় ও ধেররা চৌধুরী বাড়ির শাহ আলম চৌধুরী (৭৫) দিবাগত রাত ৩টায় নিজ বাড়িতে মারা যান। এর মধ্যে সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে নুরুল আমিনও তিন দিন আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউপির গাড়াবাড়িয়া গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে রশিদা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার কাথুলী ইউপির গাড়াবাড়িয়া গ্রামের তার নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয়। তিনি মৃত আক্কাস আলীর স্ত্রী। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফেরদৌস আহমদ জমিরী (৬৫) জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক পল্লী চিকিৎসক মারা গেছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়। ওই চিকিৎসকের নাম স্টিফেন গঞ্জালভেস (৪২)। তিনি পরিবার নিয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট চা-বাগান খ্রিস্টান পল্লীতে বসবাস করতেন। তার বাড়ি চকরিয়া পৌরসভার বড়ুয়াপাড়ায়।

জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা মারা (৬৫) গেছেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বগা ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার বগা ইউনিয়নের ৫৯ নম্বর ধাউরা ভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। এ ছাড়া বাউফলে করোনা উপসর্গ জ¦র-শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরেকজন মারা গেছেন। গতকাল উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত  মো. জালাল উদ্দিন গাজী (৭০) উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আবুল গাজীর ছেলে। নেত্রকোনার মাছ বাজারের ফল বিক্রেতা চাঁন মিয়া (৫০) করোনা উপসর্গ নিয়ে রবিবার সকালে মারা গেছেন। মৃতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের ফেসবুক পেজে জানানো হয় এ তথ্য। চাঁন মিয়া নেত্রকোনা জেলা শহরের নাগড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে অনেক বছর ধরে নেত্রকোনায় মাছ বাজারে ফলের ব্যবসা করে আসছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার ময়মনসিংহে গেলে রবিবার সকালে তিনি মারা যান। পঞ্চগড়ে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক মুক্তিযোদ্ধার (৭৫) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত ৮টায় রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ওই দিন সকাল ৯টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে তার করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ পঞ্চগড় সদরের বাসিন্দা। তিনি পঞ্চগড় সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস ইউনিটে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, বরিশাল নগরীর বেলতলার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধকে গত বুধবার সন্ধ্যায় করোনাভাইরাস ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তিনি জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর