শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সামনে বাড়বে ভয়াবহতা

জুলকার নাইন

সামনে বাড়বে ভয়াবহতা

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই শনাক্তের পাশাপাশি মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে বাড়তে থাকে, যা এখনো অব্যাহত। গতকাল সংক্রমণের শততম দিনে এসেও কেউ বলতে পারছে না কবে নাগাদ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সংক্রমণ রোধ না করা যায়, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। অতিদ্রুত সাবধান হতে হবে। নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে না পারলে পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতে ১০০ দিনে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৫৯ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে মারা গিয়েছিলেন এক হাজার ৯৮১ জন। এরপর ভারতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে। গতকাল ১৩৭তম দিনে এসে ভারতে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ জন। মৃত্যু হয়েছে নয় হাজার ৫২৪ জনের। পাকিস্তানে ৪ জুন পর্যন্ত ১০০ দিনে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৬৪ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৭৭০ জন। গতকাল ১১৫তম দিনে পাকিস্তানে মোট আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ২৮৪ জন। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে একশ দিনের পর এই বিশাল অঙ্কের আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে গতকাল একশ দিনে মোট আক্রান্ত ছিল ৯০ হাজার ৬১৯ জন। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২০৯ জনের। এখন একশ পরবর্তী দিনের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সন্দিহান দেশের বিশেষজ্ঞরাই।

দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অন্যরা ধারণা করছিলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিম্নমুখী হবে। ফলে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু এখন ?বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন সেই স্বাভাবিক জীবন কবে আসবে, সেটা অনিশ্চিত। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারা বলছেন, এপ্রিলে তারা ওই প্রক্ষেপণ বা পূর্বানুমান করেছিলেন সারা দেশে সাধা?রণ ছুটি বা লকডাউন পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে। এরপর প্রথমে পোশাক কারখানা, তারপর লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট এবং ঈদের পর গণপরিবহনসহ সব খুলে দেওয়া হয়। আগে ধারণা করা হচ্ছিল জুনের শেষ নাগাদ দেশে এক লাখ ২৩ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হবে। এখন মনে করছেন আক্রান্ত আরও বাড়বে। সেটা এক লাখ ৬০ থেকে ৬৩ হাজার হতে পারে। কবে স্বাভাবিক জীবন কবে আসবে তা নির্ভর করছে, সরকার কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয় এবং মানুষ কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তার ওপর।

কভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে। রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়লে তো হাসপাতালে জায়গা পাওয়াই কঠিন হয়ে যাবে। এখনই যেসব হাসপাতালে কভিডের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ভর্তি হয়ে গেছে। জায়গাই তো খালি নেই। সরকারকে চেষ্টা করতে হবে। তার চেয়েও জরুরি, রোগের সংক্রমণ যাতে কমে সে ব্যবস্থা নেওয়া। যে কোনোভাবেই রোগী সংখ্যা কম হোক এই প্রার্থনা করি। যেন হাসপাতালে যাওয়া না লাগে, যেন আইসিইউ না লাগে। এজন্য প্রতিকার, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি জোর দিতে হবে বেশি, যাতে সংক্রমণের হার কমে যায়। মানুষ কোনো নির্দেশনা মানছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা প্রতিকার, প্রতিরোধ কিছুই নিচ্ছে না। এজন্য বিপর্যয় রোধে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সচেতন হতে হবে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ব্রাজিলের সরকার ভেবেছিল প্রকৃতিগতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হবে। তাই তারা সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছিল। কিন্তু এরপর সে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখন বাংলাদেশে রোগীর সংখ্যা ও মৃতের হার যেভাবে বাড়ছে এটা দেশের জন্য বিপদ সংকেত দিচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে না পারলে পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এটা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না, সমন্বিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, ভাইরাসটি ধীরে ধীরে শুরু করে প্রকটভাবে ছড়াতে থাকে। তাই সে ধরনের ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। রেড জোন পুরোপুরি লকডাউন করতে হবে।  অপেক্ষাকৃত কম সংক্রমিত এলাকায় চলাচল সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কম সংক্রমিত গ্রিন জোন এলাকায় পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম পরীক্ষা শুরু হয় ২১ জানুয়ারি। প্রথম রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওই দিন তিনজন রোগী শনাক্ত হয়। এরপর এক-দুদিন পর পর দুই-তিনজন করে রোগী শনাক্ত হতে থকে। মূলত এপ্রিল মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে ঢাকার পর নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর সংক্রমণের হটস্পট ছিল। এখন সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে চট্টগ্রাম। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই কোথাও : করোনার বিস্তারের মধ্যে সব খুলে দেওয়ার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি। শারীরিক দূরত্ব না মেনেই রাস্তা-ঘাটে ঘোরাফেরা করছে মানুষ। গাদাগাদি করে যাতায়াত করছে লঞ্চে।  ট্রেনের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, ট্রেনে ওঠানামায় শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে বাড়ছে লোকসমাগম। এমনকি শিল্প এলাকাগুলোতে শ্রমিকরা দূরত্ব বজায় না রেখে মিলেমিশে যাতায়াত করছেন। রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও যানবাহনে কিছু মানুষ মাস্ক ব্যবহার করলেও একটি বড় অংশই মাস্ক ছাড়া বা খুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর